পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ۰ وا4 ‘আমরা উলটা দিকে যাই । দেবতার আদর্শে নিজেকে গড়িবার চেষ্টা না করিয়া নিজের আদর্শে দেবতাকে গড়িয়া তুলি। এবং ভক্তিপ্রবণ-স্বভাব-বশত সে দেবতাকে ভক্তিও করি। তাহাতে ভক্তিপ্রবৃত্তির চালনা-বশত মুখ পাই সন্দেহ নাই, কিন্তু ভক্তির চরম সফলতা হইতে বঞ্চিত হই। 喂 “পাখি তাহার স্বাভাবিক মাতৃসংস্কার-বশত একটা পাথরের ডিম পাইলেও আগ্রহসহকারে তা দিতে বসে, তাহাতে তাহার ডিমে তা দিবার স্বাভাবিক ব্যাকুলত৷ -নিবৃত্তি হয় বটে, কিন্তু সে তা-দেওয়া হইতে শাবক জন্মে না। উপাসনা করিবার একটা ফল, উপাসনা করিবার স্বাভাবিক অাকাঙ্ক্ষা তৃপ্তি করা—আর-একটি চরম ফল, যাহার উপাসনা করি তাহার আদর্শের দিকে আপনাকে নিয়ত প্রসারিত করা। সেই নিয়ত প্রসারণে যেমন আনন্দ তেমনি উন্নতি । অতএব যদি ইহা সত্য হয় যে, মানুষ, ঈশ্বরকে মাহুষিকতা হইতে সম্পূর্ণরূপে নির্মক্ত করিয়৷ দেখিতে পারে না, তবে দ্বিগুণ সতর্কতার সহিত র্তাহাকে এমন-সকল সীমা হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ধারণ করা উচিত যদ্বারা তাহার আদর্শ পার্থিব আদর্শের মতো" খাটে হইয়া না যায়। র্তাহাকে অসীমস্নেহময় বলিলেও, যদি বা মনে মনে মাতৃস্নেহের সহিত র্তাহার স্নেহের তুলনা না করিয়া থাকিতে পারি না, তথাপি আমাদের স্নেহের অাদর্শ যতই উৎকর্ষ লাভ করুক স্নেহময় বিশেষণকে অতিক্রম করিতে পারে না। কিন্তু যদি একটা বিশেষ কাহিনীদ্বার। র্তাহার স্নেহের অাদর্শকে বদ্ধ করি, যদি বলি তিনি বনের ব্যাধকে গুজরাটের রাজা করিয়া দিয়াছিলেন, তবে লোকবিশেষের কাছে তাহ আদরণীয় হইতে পারে, কিন্তু অপর লোকের কাছে তাহ অন্যায় পক্ষপাত বলিয়া হেয় হইতে পারে। যে লোক গুজরাটের রাজত্ব চায় দেবতার স্তবপক্ষপাতধর্ম তাহার কাছে রমণীয়, কিন্তু যে র্তাহাকে চায় সে জানে সাধনার দ্বারা তাহার অক্ষয় স্নেহ অস্তরে উপলব্ধি করিতে পারি, রাজত্বে নহে, মকদ্দম-জয়ে নহে, সাংসারিক উন্নতিতে নহে। অতএব ঈশ্বরকে যদি স্নেহময় বলিয়া জানি, তবে সুখে দুঃখে সম্পদে বিপদে তাহার স্নেহের লাঘব দেখি না। কিন্তু র্তাহাকে যদি কবিকঙ্কণের চওঁী কলিয়া জানি তবে আমার মনে স্নেহের যে আদর্শ আছে তাহ অপেক্ষাও তাহাকে অনেক কম করিয়া জানি। যদি সেইরূপ কম করিয়৷ জানি তথাপি বেশি করিয়া ভক্তি করি, তবে সে ভক্তি বন্ধ্যা হয়।’