পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় (t(tసె কিছু বাহির হয় না। সমালোচনা করিতে হইলে সেই অচেতন আনন্দকে নিতান্তই খোচা দিয়া দিয়া সচেতন করিয়া তুলিতে হয়। 馆 ‘আমি নিজেকে জেরা করিয়া অবশেষে একটা নূতন উপমা প্রাপ্ত হইয়াছি। সেইটা দিয়া সমালোচনা আরম্ভ করিব মনে করিতেছি । লিখিতে লিখিতে যদি আরও কিছু মনে পড়ে তো পরে বলিব । ‘সাহিত্যরণরঙ্গভূমে কোনো মহারথী ভীমের মতে গদাযুদ্ধ করেন, আবার কেহ বা সব্যসাচী অর্জনের মতো কোদণ্ডে ক্ষিপ্ৰহস্ত। কেহ বা প্রকাণ্ড ভার লইয়া পাঠকের মস্তকের উপর নিপাতিত করেন, কেহ বা মুহূর্তের মধ্যে পুচ্ছবান অসংখ্য লঘু শরসমূহে উক্ত নিরুপায় নিঃসহায় ব্যক্তির একেবারে মর্মস্থল বিদ্ধ করিয়া ফেলেন। ‘সাহিত্যকুরুক্ষেত্রে বঙ্কিমবাবু সেই মহাবীর অর্জুন। তাহার বিদ্যুদগামী শরজাল দশ দিক আচ্ছন্ন করিয়৷ ছুটিতেছে— তাহারা অত্যন্ত লঘু, কিন্তু লক্ষ্য বিদ্ধ করিতে মুহূর্তকাল বিলম্ব করে না।’ ১৩০৫ সালের আশ্বিন মাসের ভারতী পত্রে ‘সাকার ও নিরাকার’ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৩০৫ সালের মাঘ মাসের ভারতী পত্রে ‘নিরাকার উপাসনা’ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, উহাকে পূর্বোক্ত সাকার ও নিরাকার প্রবন্ধের অনুবৃত্তি বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে ; বর্তমান খণ্ডের পরিশিষ্টে উহা মুদ্রিত হইল। ‘সাকার ও নিরাকার প্রবন্ধের ভারতীতে প্রকাশিত কিন্তু আধুনিক সাহিত্যে বর্জিত অংশ এখানে উদদ্ভুত করা যাইতে পারে— "ইহা স্বাভাবিক। দেবতাকে যদি নিজের মতো করিয়াই গড়ি তবে এক কালের গড় দেবতাকে লইয়া আর-এক কালের তৃপ্তি হইতে পারে না। তবে দেশকালপাত্রভেদে নব নব বিকার দেবচরিত্রে প্রবেশ করিবেই। অথচ এই-সকল বিকার সত্ত্বেও যে আমাদের ভক্তির হাস হয় না সে আমাদের মানসিক জড়ত্ব এবং সে আমাদের দুৰ্গতির এক কারণ। ‘উক্তি আমাদিগকে ভক্তিভাজনের দিকে অগ্রসর করে, অলক্ষিতভাবে সেই অাদর্শে আমাদের মনকে গড়িয়া তোলে। এইজন্য যে-সকল উদ্ধত লোক আপনার চেয়ে কাহাকেও বড়ো বলিয়া জানে না তাহারা বাহিরে অহংকারে স্ফীত হয়, কিন্তু ভিতরে তাহার প্রকৃতি আপন সংকীর্ণ কারাগারে বদ্ধ থাকে। ৯ পৃ. ৫১৯, ২৫শ ছত্রের পর ।