পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Bes রবীন্দ্র-রচনাবলী বলিয়া মনে করা হয়। তাহাদিগকে মানুষ বলিয়া গণ্য করা হয় না। ছেলেরা যে বই পড়বে তাহার কিছু বুঝিবে এবং কিছু বুঝিবে না, এইরূপ বিধান থাকা চাই। আমরা ছেলেবেলায় একধার হইতে বই পড়িয়া যাইতাম- যাহা বুঝিতাম এবং যাহা বুর্কিতাম না। দুই-ই আমাদের মনের উপর কাজ করিয়া যাইত। সংসারটাও ছেলেদের উপর ঠিক তেমনি করিয়া কাজ করে। ইহার যতটুকু তাহারা বোঝে ততটুকু তাহারা পায়, যাহা বোঝে না। তাহাও তাহাদিগকে সামনের দিকে ঠেলে । দীনবন্ধু মিত্র মহাশয়ের জামাইবারিক প্রহসন যখন বহির হইয়াছিল’ তখন সে বই পড়বার বয়স আমাদের হয় নাই। আমার কোনো একজন দূরসম্পৰ্কীয়া আখীয়া সেই বইখানি পড়িতেছিলেন। অনেক অনুনয় করিয়াও তাঁহার কােছ হইতে উহা আদায় করিতে পরিলাম না। সে বই তিনি বাক্সে চাবিবন্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন। নিষেধের বাধায় আমার উৎসাহ আরো বাড়িয়া উঠিল, আমি তঁহকে শাসাইলাম, “এ বই আমি পড়বই ৷” মধ্যাহ্নে তিনি গ্রাবু খেলিতেছিলেন- আঁচলে বাধা ঢাবির গোচ্ছা তঁর পিঠে বুলিতেছিল। তাসখেলায় আমার কোনোদিন মন যায় নাই, তাহা আমার কাছে বিশেষ বিরক্তিকর বোধ হইত। কিন্তু সেদিন আমার ব্যবহারে তাহা অনুমান করা কঠিন ছিল। আমি ছবির মতো স্তন্ধ হইয়া বসিয়া ছিলাম। কোনো-এক পক্ষে আসন্ন ছক্কাপাঞ্জার সম্ভাবনায় খেলা যখন খুব জমিয়া উঠিয়াছে, এমন সময় আমি আন্তে আন্তে আঁচল হইতে চাবি খুলিয়া লইবার চেষ্টা করিলাম। কিন্তু এ কার্যে অঙ্গুলির দক্ষতা ছিলনা, তাহার উপর আগ্রহেরও চাঞ্চল ছিল- ধরা পড়িয়া গেলাম। যাহার চাবি তিনি হাসিয়া পিঠ হইতে আঁচল নামাইয়া চাবি কোলের উপর রাখিয়া আবার খেলায় মন দিলেন। এখন আমি একটা উপায় ঠাওরইলাম। আমার এই আত্মীয়ার দোক্তা খাওয়া অভ্যাস ছিল । আমি কোথাও হইতে একটি পাত্ৰে পান দোক্তা সংগ্ৰহ করিয়া তাহার সম্মুখে রাখিয়া দিলাম। যেমনটি, আশা করিয়াছিলাম তাহাঁই ঘটিল। পিক ফেলিবার জন্য তঁহাকে উঠতে হইল ; চাবি-সমেত আঁচল কোল হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়া নীচে পড়িল এবং অভ্যাসমত সেটা তখনই তুলিয়া তিনি পিঠের উপর ফেলিলেন । এবার চাবি চুরি গেল এবং চাের ধরা পড়িল না। বই পড়া হইল। তাহার পরে চাবি এবং বই স্বত্বাধিকারীর হাতে ফিরাইয়া দিয়া চৌৰ্যাপরাধের আইনের অধিকার হইতে আপনাকে রক্ষা করিলাম। আমার আত্মীয়া ভৎসনা করিবার চেষ্টা করিলেন। কিন্তু তাহা যথোচিত কঠোর হইল না ; তিনি মনে মনে হাসিতেছিলেন- আমারও সেই দশা । । রাজেন্দ্রলাল মিত্ৰ মহাশয় বিবিধাৰ্থ সংগ্ৰহ বলিয়া একটি ছবিওয়ালা মাসিকপত্র বাহির করিতেন। তাহারই বাধানো একভাগ সেজদাদার আলমারির মধ্যে ছিল। সেটি আমি সংগ্ৰহ করিয়াছিলাম। বারবার করিয়া সেই বইখানা পড়বার খুশি আজও আমার মনে পড়ে । সেই বড়ো টীেকা বইটাকে বুকে লইয়া আমাদের শোবার ঘরের তক্তাপোশের উপর চিত হইয়া পড়িয়া নৰ্থল তিমিমৎস্যের বিবরণ, কাজির বিচারের কৌতুকজনক গল্প, কৃষ্ণকুমারীর উপন্যাস পড়িতে কত দুটির দিনের মধ্যাহ্ন। কাটিয়াছে। এই ধরনের কাগজ একখানিও এখন নাই কেন। এক দিকে বিজ্ঞান তত্ত্বজ্ঞান পুরাতত্ত্ব, অন্যদিকে প্রচুর গল্প কবিতা ও তুচ্ছ ভ্ৰমণকাহিনী দিয়া এখনকার কাগজ ভরতি করা হয়। সর্বসাধারণের দিব্য আরামে পড়িবার একটি মাঝারি শ্রেণীর কাগজ দেখিতে পাইনা। বিলাতে চেম্বার্স জার্নাল, কাসলসম্যাগাজিন, ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন প্রভৃতি অধিকসংখ্যক পত্ৰই সৰ্বসাধারণের সেবায় নিযুক্ত। তাহারা জানভাণ্ডার হইতে সমস্ত দেশকে নিয়মিত মোটা ভাত মোটা কাপড় জোগাইতেছে। এই মোটা ভাত মোটা কাপড়ই বেশির ভাগ লোকের বেশি মাত্রায় কাজে লাগে । » भ6ि »४१२ qSu GL BDBLSBL BBBDuBDBuS uDuBTB BrBDB uLS LBDS »ፃፃe "ቐቐ[›br¢›]