পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় WpNA এই গেল আমার ভূমিকা। তার পরে, আমাদের শিল্পশািন্ত্র চিত্রকলা সম্বন্ধে কী বলিতেছে বুধিয়া দেখা যাক । সেই শাস্ত্ৰে বলে, ছবির ছয় অঙ্গ। রূপভেদ, প্রমাণ, ভাব, লাবণ্য, সাদৃশ্য ও বর্ণিকাভঙ্গ। ‘রূপভেদঃ- ভেদ লইয়া শুরু। গােড়ায় বলিয়াছি ভেদেই রূপের সৃষ্টি। প্রথমেই রূপ আপনার বহু বৈচিত্র্য লইয়াই আমাদের চােখে পড়ে। তাই ছবির আরম্ভ হইল রাপের ভেদে—একের সীমা হইতে আরের সীমার পার্থক্যে । . কিন্তু শুধু ভেদে কেবল বৈষম্যই দেখা যায়। তার সঙ্গে যদি সুষমাকে না দেখানো যায়। তবে চিত্রকলা তো ভূতের কীর্তন হইয়া উঠে। জগতের সৃষ্টিকাৰ্যেবৈষম্য এবং সীেষম্য রূপে রূপে একেবারে গায়ে গায়ে লাগিয়া আছে ; আমাদের সৃষ্টিকার্যে যদি তার সেটা অন্যথা ঘটে। তবে সেটা সৃষ্টিই হয় না, অনাসৃষ্টি হয়। বাতাস যখন স্তব্ধ তখন তাহা আগাগোড়া এক হইয়া আছে। সেই এককে বীণার তারাদিয়া আঘাত করে, তাহা ভাঙিয়া বহু হইয়া যাইবে। এই বহুর মধ্যে ধ্বনিগুলি যখন পরস্পর পরস্পরের ওজন মানিয়া চলে তখন তাহা সংগীত, তখনই একের সহিত অন্যের সুনিয়ত যোগ- তখনই সমস্ত বহু তাহার বৈচিত্র্যের ভিতর দিয়া একই সংগীত প্রকাশ করে। ধ্বনি এখানে রূপ, এবং ধ্বনির সুষম যাহা সুর তাঁহাই প্রমাণ। ধ্বনির মধ্যে ভেদ, সুরের মধ্যে এক । এইজন্য শাস্ত্ৰে ছবির ছয় অঙ্গের গোড়াতে যেখানে রূপভেদ আছে সেইখনেই তার সঙ্গে সঙ্গে 'প্রমাণানি অর্থাৎ পরিমাণ জিনিসটাকে একেবারে যমক করিয়া সাজাইয়াছে। ইহাতে বুঝিতেছি ভেদ নইলে মিল হয় না। এইজন্যই ভেদ, ভেদের জন্য ভেদ নহে; সীমা নহিলে সুন্দর হয় না। এইজন্যই সীমা, নহিলে । আপনাতেই সীমার সার্থকতা নাই, ছবিতে এই কথাটাই জানাইতে হইবে। রািপটাকে তার পরিমাণে দাড় করানাে চাই। কেননা আপনার সত্য মাপে যে চলিল অর্থাৎ চারিদিকের মাপের সঙ্গে যার খাপ খাইল সেই হইল সুন্দর। প্রমাণ মানে না যে রূপ সেই কুরাপ, তা সমগ্রের বিরোধী। রূপের রাজ্যে যেমন জ্ঞানের রাজ্যেও তেমনি। প্রমাণ মানে না যে যুক্তি সেই তো কুযুক্তি। অর্থাৎ সমস্তের মাপকাঠিতে যার মাপে কমিবেশি হইল, সমস্তের তুলাদণ্ডে যার ওজনের গরমিল হইল সেই তো মিথ্যা বলিয়া ধরা পড়িল। শুধু আপনার মধ্যেই আপনি তো কেহ সত্য হইতে পারে না, তাই যুক্তিশাস্ত্ৰে প্রমাণ করার মানে অন্যকে দিয়া এককে মাপা । তাই দেখি সত্য এবং সুন্দরের একই ধর্ম। এক দিকে তাহা রূপের বিশিষ্টতায় চারি দিক হইতে পৃথক ও আপনার মধ্যে বিচিত্র, আর-এক দিকে তাহা প্রমাণের সুষমায় চারি দিকের সঙ্গে ও আপনার মধ্যে সামঞ্জস্য মিলিত । তাই যারা গভীর করিয়া বুঝিয়েছে তারা বলিয়াছে সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য। ছবির ছয় অঙ্গের গোড়ার কথা হইল রূপভেদঃ প্রমাণানি । কিন্তু এটা তো হইল বহিরঙ্গ- একটা Vse (V V8 | 呜 কেননা, মানুষ তো শুধু চােখ দিয়া দেখে না, চোখের পিছনে তার মনটা আছে। চােখ ঠিক যেটি দেখিতেছে মন যে তারই প্ৰতিবিম্বটুকু দেখিতেছে তাহা নহে। চোখের উচ্ছিষ্টেই মন মানুষ এ কথা মানা ठ्ठ -ळ्या हट् रू झाल्या ही एका प्रया झाल्या ० ही व्या काळ गांश 872, 瞿 তাই শাস্ত্র রূপভেদঃ প্রমাণানিতে যড়ঙ্গের বহিরঙ্গ সারিয়া অন্তরঙ্গের কথায় বলিতেছেন- ‘ভাবলাবণ্য যোজনং’- চেহারার সঙ্গে ভাব ও লাবণ্য যোগ করিতে হইবে- চোখের কাজের উপরে মনের কাজ ফলাইতে হইবে ; কেননা শুধু কারু কাজটা সামান্য, চিত্র করা চাই-চিত্রের প্রধান কাজই চিৎকে দিয়া । ভাব বলিতে কী বুঝায় তাহা আমাদের একরকম সহজে জানা আছে। এইজন্যই তাহাকে বুঝাইবার চেষ্টায় যাহা বলা হইবে তাঁহাই বুঝা শক্ত হইবে। স্ফটিক যেমন অনেকগুলা কোণ লইয়া দানা বাধিয়া দাঁড়ায় । তেমনি ‘ভাবী কথাটা অনেকগুলা অর্থকে মিলাইয়া দানা বঁধিয়াছে। এ সকল কথার মুশকিল। এই যে, ইহাদের সব অর্থ আমরা সকল সময়ে পুরাভাবে ব্যবহার করি না, দরকার মত ইহাদের অর্থস্থােটাকে ভিন্ন পর্যয়ে সাজাইয়া এবং কিছু কিছু বাদসাদ দিয়া নানা কাজে লাগাই। ভােব বলিতে feelings, ভােব বলিতে