পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

AVO রবীন্দ্র-রচনাবলী হিন্দুর সঙ্গে পৃথক হইয়া নিজের আসনটা চৌকা করিয়া পাতিয়া লইয়া চারি দিকে সাম্প্রদায়িকতার বেড়া তুলিয়া দিব এবং উচ্চৈঃস্বরে বলিতে থাকিব, এসো। খ্রীস্টান, এসো মুসলমান, এসো য়িহুদি, আমরা ব্ৰহ্মনামের সদাব্রত খুলিয়াছি, কিন্তু এই সদাব্রতের আয়োজনটি হিন্দুর নহে, ইহা কেবল আমাদেরই এই কয়জনের ; ইহার মধ্যে অতীতের কোনো সাধনা নাই, চিরন্তনকালের ঐতিহাসিক পরীক্ষাশালার কোনো ছাপ নাই, মানবসমাজে সত্যমাত্রই বিধাতার স্বহস্তস্বাক্ষরিত যে একটি বিশেষ দেশকালের পরিচয় লইয়া আসে। ইহার মধ্যে সেই স্বাক্ষর নাই, সেই পরিচয় নাই- এই যে আমাদের ভাবাবেগ, এই যে আমাদের আইডিয়াল- কবন্ধের মতো ইহার মুণ্ড নাই কেবল দেহ আছে, ইহার বিশেষত্ব নাই কেবল বিশ্বত্ব আছে ; ইহা নিজের পায়ের তলার আশ্রয়কে মাটি বলিয়া অবজ্ঞা করে এবং শূন্যের উপর দাড়াইয়া জগৎকে আলিঙ্গন করিতে চায়, তাহাও নিজের হাত দিয়া নহে পাছে সেই নিজত্বের দ্বারা বিশ্বজনীনতার খর্বতা ঘটে । “ --তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, জ্যৈষ্ঠ ১৩১৯ হিন্দু-বিশ্ববিদ্যালয় প্ৰবন্ধটি চৈতন্য লাইব্রেরির অধিবেশন উপলক্ষে রিপন কলেজে ২৯ অক্টোবর ১৯১১ তারিখে পঠিত হয় । শিক্ষার বাহন। ২৪ অগ্রহায়ণ ১৩২২ তারিখে রামমোহন লাইব্রেরিতে পঠিত হয় । মাতৃভাষাকে শিক্ষার বাহন করিবার প্রস্তাব রবীন্দ্রনাথের এই নৃতন নহে, ১২৯৯ সালে “শিক্ষার হেরফের রচনার সময় হইতে তিনি এ-বিষয়ে আলোচনা করিয়াছেন ; এবং ১৩৪০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ ** ও “শিক্ষার বিকিরণ*** প্ৰবন্ধে ও ১৩৪৩ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক পদবী-সম্মান বিতরণ-সভায় পঠিত ‘ছাত্র-সম্ভাষণ*** প্ৰবন্ধেও, প্রসঙ্গক্রমে এ-বিষয়ে মনোবেদনা জ্ঞাপন করেন ; ১৩৪৩ সালে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত শিক্ষা-সপ্তাহে পঠিত ‘শিক্ষার স্বাঙ্গীকরণ** প্রবন্ধেও দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কর্তৃপক্ষের নিকট একই আবেদন জানাইয়া গিয়াছেন। শিক্ষার বাহন প্রবন্ধে তিনি যে প্রস্তাব করিয়াছিলেন “বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বাড়িটার ভিতরের আঙিনায় যেমন চলিতেছে চলুক, কেবল তার এই বাহিরের প্রাঙ্গণটাতে--- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাটাকে যদি সমস্ত বাঙালির জিনিস করিয়া তোলা যায় তাতে বাধাটা কী ?--- প্রেপারেটরি ক্লাস পর্যন্ত একরকম পড়াইয়া তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়টার কাছে যদি ইংরেজি বাংলা দুটাে বড়ো রাস্তা খুলিয়া দেওয়া যায় তা হইলে কি নানা প্রকারে সুবিধা হয় না ?” শিক্ষার স্বাঙ্গীকরণ প্রবন্ধেও তদনুরূপ প্ৰস্তাব করিয়াছিলেন । এই সময়ে তিনি বঙ্গের তদানীন্তন শিক্ষাসচিব আজিজুল হক মহাশয়কে যে চিঠি লিখিয়াছিলেন নীচে তাহা অংশত মুদ্রিত হইল । আমার আর একটি প্রস্তাব আমাদের শিক্ষা-বিভাগের সম্মুখে আমি উপস্থিত করতে চাই । দেশের যে-সকল পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা নানাকারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে ৫০ আলোচ্য বিষয়টি লইয়া ১৩১৮ ও ১৩১৯ সালের তত্ত্বকৌমুদীতে আরো কয়েকটি সম্পাদকীয় মন্তব্য ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৩১৯ জ্যৈষ্ঠের প্রবাসীতে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ব্রাহ্ম হিন্দু কি অহিন্দু প্রবন্ধে, ব্ৰাহ্মগণ হিন্দু, এই মত সমর্থন করেন । ১৩২১ সালের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাতে অজিতকুমার চক্রবর্তী প্রসঙ্গক্রমে বিষয়টি পুনরুত্থাপিত করেন, তাহার আলোচনায় রবীন্দ্রনাথের মত সমর্থিত হয় ; তাহার অনুবৃত্তিরূপ। ঐ সালের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ও তত্ত্বকৌমুদীতে এ-বিষয়ে অনেক বাদ-প্রতিবাদ প্রকাশিত হয় ; গুরুচরণ মহলানবিশ, সুকুমার রায়চৌধুরী প্রভৃতি অজিতকুমারের প্রতিবাদ করেন । ৫১ রবীন্দ্র-রচনাবলী, দ্বাদশ খণ্ড (সুলভ ৬) ; ঐ খণ্ডে “শিক্ষার গ্রন্থপরিচয়ও দ্রষ্টব্য। ৫২ “শিক্ষা’, ১৩৫১ সংস্করণ দ্রষ্টব্য ।