পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫৮ l রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশু। দেখো দেখো চন্দ্রা, সর্দারের দুচক্ষুর ছোয়াচ যেন তোমাকে না লাগে, তাহলে আমাদের দেখেও তোমার চক্ষু লাল হয়ে উঠবে।— আচ্ছা, তুই কী বলিস ফাগুলাল । ফাগুলাল। সত্যি কথা বলি দাদা, নন্দিনীকে যখন দেখি, নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা করে । ওর সামনে কথা কইতে পারি নে। গোকুল। বিশুভাই, ওই মেয়েকে দেখে তোমার মন ভুলেছে সেইজন্যে দেখতে পাচ্ছ না ও কী অলক্ষণ নিয়ে এসেছে। বুঝতে বেশি দেরি হবে না, বলে রাখলুম। ফাগুলাল। বিশুভাই, তোমার বেয়ান জানতে চায় আমরা মদ খাই কেন । বিশু। স্বয়ং বিধির কৃপায় মদের বরাদ জগতের চারদিকেই, এমন-কি, তোমাদের ওই চোখের কটাক্ষে । আমাদের এই বাহুতে আমরা কাজ জোগাই, তোমাদের বাহুর বন্ধনে তোমরা মদ জোগাও । জীবলোকে মজুরি করতে হয়, আবার মজুরি ভুলতেও হয়। মদ না হলে ভোলাবে কিসে। চন্দ্রা। তাই বই কি । তোমাদের মতো জন্মমাতালের জন্যে বিধাতার দয়ার অস্ত নেই। মদের ভাণ্ড উপুড় করে দিয়েছেন। বিশু। একদিকে ক্ষুধা মারছে চাবুক, তৃষ্ণা মারছে চাৰুক ; তারা জাল ধরিয়েছে,— বলছে, কাজ করে। অন্য দিকে বনের সবুজ মেলেছে মায়া রোদের সোনা মেলেছে মায়া, ওরা নেশা ধরিয়েছে,-– বলছে, ছুটি ছুটি । চন্দ্রা। এইগুলোকে মদ বলে নাকি । বিশু। প্রাণের মদ, নেশা ফিকে, কিন্তু দিনরাত লেগে আছে। প্রমাণ দেখো । এ রাজ্যে এলুম, পাতালে সিধকাটার কাজে লাগলুম, সহজ মদের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেল। অন্তরাত্মা তাই তো হাটের মদ নিয়ে মাতামাতি করছে। সহজ নিশ্বাসে যখন বাধা পড়ে, তখনই মানুষ ছাপিয়ে নিশ্বাস টানে । গান তোর প্রাণের রস তো শুকিয়ে গেল ওরে, তবে মরণরসে নে পেয়ালা ভরে । সে-যে চিতার আগুন গালিয়ে ঢাল, সব জলনের মেটায় জালা, সব শূন্তকে সে অট্ট হেসে দেয়-যে রঙিন করে। চন্দ্র। এসো-না বেয়াই, পালাই আমরা।