পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী কেনারাম গোসাইকে আনিয়ে রেখেছি। এদের কাছ থেকে প্রণামী আদায় করে খরচটা উঠে যাবে। গোসাইজির কাছ থেকে রোজ সন্ধেবেলায় এরা— ফাগুলাল। না না, সে হবে না, সর্দারজি । এখন সন্ধেবেলায় মদ খেয়ে বড়ো জোর মাতলামি করি, উপদেশ শোনাতে এলে নরহত্যা ঘটবে। বিশু। চুপ চুপ, ফাগুলাল । গোসাইয়ের প্রবেশ সর্দার । এই-যে বলতে বলতেই উপস্থিত। প্রভু, প্রণাম । আমাদের এই কারিগরদের দুর্বল মন, মাঝে-মাঝে অশাস্ত হয়ে ওঠে। এদের কানে একটু শাস্তিমন্ত্র দেবেন— ভারি দরকার । গোসাই । এই এদের কথা বলছ ? আহা, এরা তো স্বয়ং কুৰ্ম-অবতার। বোঝার নিচে নিজেকে চাপা দিয়েছে বলেই সংসারটা টিকে আছে। ভাবলে শরীর পুলকিত হয়। বাবা ৪৭ ফ, একবার ঠাউরে দেখো, যে-মুখে নাম কীর্তন করি সেই মুখে অন্ন জোগাও তোমরা ; শরীর পবিত্র হল যে-নামাবলিখানা গায়ে দিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেখানা বানিয়েছ তোমরাই । একি কম কথা। আশীর্বাদ করি সর্বদাই অবিচলিত থাকে, তাহলেই ঠাকুরের দয়াও তোমাদের পরে অবিচলিত থাকবে । বাবা, একবার কণ্ঠ খুলে বলে ‘হরি হরি’ । তোমাদের সব বোঝা হালকা হয়ে যাক । হরিনাম আদাবস্তে চ মধ্যে চ | চন্দ্র। আহ, কী মধুর। বাবা, অনেকদিন এমন কথা শুনি নি। দাও দাও, আমাকে একটু পায়ের ধুলো দাও। ফাগুলাল। এতক্ষণ অবিচলিত ছিলুম, কিন্তু আর তো পারি নে। সর্দার, এত বড়ে অপব্যয় কিসের জন্যে । প্রণামী আদায় করতে চাও রাজী আজি, কিন্তু ভণ্ডামি সইব না। বিশু। ফাগুলাল খেপলে আর রক্ষে নেই, চুপ চুপ। চন্দ্র। ইহকাল পরকাল তুমি দু-ই খোয়াতে বসেছ ? তোমার গতি হবে কী। এমন মতি তোমার আগে ছিল না, আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের উপরে ওই নন্দিনীর হাওয়া লেগেছে । গোসাই । যাই বল সর্দার, কী সরলত। পেটে-মুখে এক, এদের আমরা শেখাব কি এরাই আমাদের শিক্ষা দেবে। বুঝেছ ? সর্দার। বুঝেছি বই-কি। এও বুঝেছি উৎপাত বেধেছে কোথা থেকে। এদের