পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী \లbrశ్రీ নন্দিনী । মানুষটাকে মরতে দিলে অপরাধ হবে না ? অধ্যাপক। যে-অপরাধের শাস্তি দেবার কেউ নেই সেটা পাপ হতে পারে কিন্তু অপরাধ নয়। নন্দিনী, এ-সমস্ত থেকে তুমি একেবারে চলে এসো। শিকড়ের মুঠো মেলে গাছ মাটির নিচে হরণশোষণের কাজ করে, সেখানে তো ফুল ফোটায় না । ফুল ফোটে উপরের ডালে, আকাশের দিকে। ওগো রক্তকরবী, আমাদের মাটির তলাকার খবর নিতে এসো না, উপরের হাওয়ায় তোমার দোল দেখব বলে তাকিয়ে আছি – ওই-যে সর্দার । আমি তবে সরি। তোমার সঙ্গে কথা কই এ ও সইতে পারে না। নন্দিনী । আমার উপরে কেন এত রাগ । অধ্যাপক। আন্দাজে বলতে পারি। তুমি ভিতরে-ভিতরে ওর মনের তারে টান লাগিয়েছ ; যতই সুর মিলছে না, বেস্থর ততই কড়া হয়ে চেচিয়ে উঠছে। [ প্রস্থান সর্দারের প্রবেশ নন্দিনী । সর্দার ! সর্দার । নন্দিনী, তোমার সেই কুঁদফুলের মালাগাছটি আমার ঘরে দেখে গোসাইজির দুই চক্ষু— এই-যে স্বয়ং এসেছেন। প্রণাম ! প্রভু, সেই মালাটি নন্দিনী আমাকে দিয়েছিল ! গোসাইয়ের প্রবেশ গোসাই । আহা, শুভ্র প্রাণের দান, ভগবানের শুভ্র কুন্দফুল। বিষয়ী লোকের হাতে পড়েও তার শুভ্রতা মান হল না। এতেই তো পুণ্যের শক্তি আর পাপীর ত্রাণের আশা দেখতে পাই । নন্দিনী । গোসাইজি, এই লোকটির একটা ব্যবস্থা করে । এর জীবনের আর কতটুকুই বা বাকি । গোঁসাই। সবদিক ভেবে ষে-পরিমাণ বঁাচা দরকার, আমাদের সর্দার নিশ্চয় ওকে ততটুকু বাচিয়ে রাখবে। কিন্তু বংসে, এ-সব আলোচনা তোমাদের মুখে শ্রুতিকটু লাগে, আমরা পছন্দ করি নে । নন্দিনী । এ-রাজ্যে বঁাচিয়ে রাখার বুঝি পরিমাণবিচার আছে ? গোঁসাই। আছে বই-কি। পার্থিব জীবনটা যে সীমাবদ্ধ। তাই হিসাব বুঝে তার ভাগবাটোস্কার করতে হয়। আমাদের শ্রেণীর লোকের পরে ভগবান দুঃসহ দায়িত্ব চাপিয়েছেন, সেটা বহন করতে গেলে আমাদের ভাগে প্রাণের সারাংশ অনেকটা