পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8cm)o # রবীন্দ্র-রচনাবলী আছেন, শোকানলের আলোকেই এই শ্রদ্ধাকে উজ্জল করে তুলতে হবে যে, মা আছেন, তিনি কখনোই হারাতে পারেন না। সত্যের মধ্যে মা চিরকাল ছিলেন বলেই তাকে একদিন পেয়েছি— নইলে একদিনো পেতুম না— এবং সত্যের মধ্যেই মা আছেন বলেই আজো তার অবসান নেই। সত্যের মধ্যেই, অমৃতের মধ্যেই সমস্ত আছে, এ-কথা আমরা পরমাত্মীয়ের মৃত্যুতেই যথার্থত উপলব্ধি করি । যাদের সঙ্গে আমাদের স্নেহপ্রেমের, আমাদের জীবনের গভীর যোগ নেই, তারা আছে কি নেই তাতে আমাদের কিছুই আসে যায় না— সুতরাং মৃত্যুতে তারা আমাদের কাছে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। এইখানেই মৃত্যুকে আমরা বিনাশ বলেই জানি । কিন্তু এ মৃত্যুর অর্থ কী ভেবে দেখো । যে-মানুষকে আনন্দের মধ্যে দেখি নি, তাকে অমৃতের মধ্যেই দেখি নি— আমার পক্ষে সে কেবলমাত্র চোখে-দেখা কানে-শোনার অনিত্য লোকেই এতদিন ছিল ;– যেখানে তাকে সত্যরূপে বৃহৎরূপে অমররূপে দেখতে পেতুম, সেখানে সে আমাকে দেখা দেয় নি। যেখানে আমার প্রেম সেইখানেই আমি নিত্যের স্বাদ পাই, অমৃতের পরিচয় পেয়ে থাকি। সেখানে মানুষের উপর থেকে তুচ্ছতার আবরণ চলে যায়, মানুষের মুল্যের সীমা থাকে না । সেই প্রেমের মধ্যে যে-মানুষকে দেখেছি, তাকেই আমি অমৃতের মধ্যে দেখেছি। সমস্ত সীমাকে অতিক্রম করে তার মধ্যে অসীমকে দেখতে পাই এবং মৃত্যুতেও সে আমার কাছে মরে না। যাকে আমরা ভালোবাসি মৃত্যুতে সে যে থাকবে না, এই কথাটা আমাদের সমস্ত চিত্ত অস্বীকার করে ;– প্রেম যে তাকে নিত্য বলেই জানে, সুতরাং মৃত্যু যখন তার প্রতিবাদ করে, তখন সেই প্রতিবাদকে মেনে নেওয়া তার পক্ষে এতই কঠিন হয়ে ওঠে। যে-মানুষকে আমরা অমৃতলোকের মধ্যে দেখেছি, তাকে মৃত্যুর মধ্যে দেখব কেমন করে । মনের ভিতরে তখন একটি কথা এই ওঠে— প্রেম কি কেবল আমারি । কোনো বিশ্বব্যাপী প্রেমের যোগে কি আমার প্রেম সত্য নয়। ষে-শক্তিকে অবলম্বন করে আমি ভালোবাসছি, আনন্দ পাচ্ছি, সেই শক্তিই কি সমস্ত বিশ্বে সকলের প্রতিই আনন্দিত হয়ে আছেন না। আমার প্রেমের মধ্যে এমন যে একটি অমৃত আছে, যেঅমৃতে আমার প্রেমাম্পদ আমার কাছে এমন চিরন্তন সত্য— সেই অমৃত কি সেই অনন্ত প্রেমের মধ্যে নেই। র্তার সেই অনন্ত প্রেমের স্বধায় আমরা কি অমর হয়ে উঠি নি। যেখানে তার আনন্দ সেইখানেই কি অমৃত নেই।