পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नभाव्नांbeों কত মধু-যামিনী রভিসে গোয়ায়ন না বুঝানু কৈছন কেল, লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখানু তবু হিয়ে জুড়েন না গেল। যত যত রসিকজন রস-অনুমগন অনুভব কহে, না পেখে! বিদ্যাপতি কহে প্ৰাণ জুড়াইতে লাখে না মিলল। একে। বিদ্যাপতির অনেক স্থলে ভাষার মাধুর্য, বর্ণনার সৌন্দৰ্য আছে, কিন্তু চণ্ডিদাসের নূতনত্ব আছে, ভাবের মহত্ত্ব আছে, আবেগের গভীরতা আছে। যে বিষয়ে তিনি লিখিয়াছেন, তাহাতে তিনি একেবারে মগ্ন হইয়া লিখিয়াছেন। তিনি নিজের রাজাকিনী প্ৰণয়িনী সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন তাহা উদ্ধৃত করি। — শুন ব্রজকিনী রামি ও দুটি চরণ শীতল জানিয়া শরণ লইনু আমি। তুমি বেদ-বাগিনী, হরের ঘরাণী, তুমি সে নয়নের তারা, তুমি সে গলার হারা। রজকিনীরাপ কিশোরীস্বরাপ কামগন্ধ নাহি তার, রজকিনী-প্ৰেম নিকষিত হেম বড় চণ্ডিদাসে গায়। চণ্ডিদাসের প্ৰেম কি বিশুদ্ধ প্ৰেম ছিল। তিনি প্রেম ও উপভোগ উভয়কে স্বতন্ত্ৰ করিয়া দেখিতে পারিয়াছেন। তাই তিনি প্ৰণয়িনীর রূপ সম্বন্ধে কহিয়াছেন “কামগন্ধ নাহি তায় !” আর এক স্থলে চণ্ডিদাস কহিয়াছেন রজনী দিবসে হব পরিবশে, স্বপনে রাখিব লোহাএকত্ৰ থাকিব নাহি পারশিব। ভাবিনী ভাবের দেহা।। দিবস রজনী পরিবশে থাকিব, অথচ প্রেমকে স্বপ্নের মধ্যে রাখিয়া দিব। একত্রে থাকিব অথচ তাহার দেহ স্পর্শ করিব না। অর্থাৎ, এ প্ৰেম বাহ্য জগতের দর্শন-সম্পর্শনের প্ৰেম নহে, ইহা স্বপ্নের। ধন, স্বপ্নের মধ্যে আবৃত থাকে, জাগ্ৰত জগতের সহিত ইহার সম্পর্ক নাই। ইহা শুদ্ধমাত্র প্ৰেম, আর কিছুই নহে। যেকালে চণ্ডিদাস ইহা লিখিয়াছিলেন, ইহা সেকালের কথা নয়। কঠোর ব্রতসাধনা-স্বরূপে প্রেমসাধনা করা চণ্ডিদাসের ভাব, সে ভাব তাহার সময়কার লোকের মনোভাব নহে, সে ভাব এখনকার সময়ের ভাবও নহে-সো ভাবের কাল ভবিষ্যতে আসিবে। যখন প্রেমের জগৎ হইবে, যখন প্ৰেম বিতরণ করাই জীবনের একমাত্র ব্রত হইবে- পর্বে যেমন যে যত বলিষ্ঠ ছিল সে ততই গণ্য হইত, তেমনি এমন সময় যখন আসিবে, যখন যে যত প্রেমিক হইবে সে ততই আদর্শস্থল হইবে- যাহার হৃদয়ে অধিক স্থান থাকিবে, যে যত অধিক লোককে হৃদয়ে প্রেমের প্ৰজা করিয়া রাখিতে পরিবে সে ততই ধনী বলিয়া খ্যাত হইবে- যখন হৃদয়ের দ্বার দিবারাত্রি উদঘাটিত থাকিবে ও কোনো অতিথি রুদ্ধ জ্বারে আঘাত করিয়া বিফলমনোরথ হইয়া ফিরিয়া না N G || ዒ