পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6b Σ Σ. Ο বলেন তাহার মর্ম এই-- “সমস্ত বৃক্ষটির উপর আমাদের বিদ্বেষ নাই; কিন্তু উহার কতকগুলা জটিল শিকড় যত অনার্থের মূল - আমরা শুদ্ধ কেবল ঐ শিকড়গুলা ছেদন করিব। আহা, গাছটি বাচিয়া থাক ?” যদি তুমি বিধবাবিবাহ দিতে প্ৰস্তুত না থােক, তবে বিধবারা যেমন আছে তেমনি থাক! সমাজ যে বিধবাদের উপবাস করিতে বলে, মাছ মাংস খাইতে- বেশভূষা করিতে নিষেধ করে, তাহার কারণ সমাজের খামখেয়ালী অত্যাচারস্পাহা নহে। সমাজ বিধবাদিগকে বিধবা রাখিবার জন্যই এই কঠোর উপায় অবলম্বন করিয়াছে। যদি তুমি চিরবৈধব্য ব্ৰত ভালোবাস,তবে আর এ সম্বন্ধে কথা কহিয়ে না! তুমি মনে করিতেছ। ঐ বাকাচোরা শিকড়গুলা গাছের কতকগুলা অর্থহীন গলগ্রহ মাত্র; তাহা নয়— উহারাই আশ্রয় , উহারাই প্ৰাণ ; যদি অসবৰ্ণ বিবাহে তোমার আপত্তি থাকে, তবে পূর্বরাগমূলক বিবাহকে খবরদার প্রশ্রয় দিয়ে না ; ইহা সকলেই জানেন, অনুরাগের হিসাব-কিতাবের জ্ঞান কিছু মাত্র নাই। সে ঘর বুঝিয়া, দর করিয়া, গোত্র জানিয়া পাত্রবিশেষকে আশ্রয় করে না। তাহার নিকট রাঢ় বারেন্দ্ৰ নাই, গোত্ৰপ্ৰভেদ নাই; ব্ৰাহ্মণ শূদ্র নাই । অতএব অনুরাগের উপর বিবাহের ঘটকালি-ভার অর্পণ করিলে সে জাতি বিজাতিকে একত্ৰ করিবে, ইহা নিশ্চয় । অতএব, হয়, অসবর্ণ বিবাহ দেও, নয়, পিতামাতার প্রতি সন্তানের বিবাহভার থাক ? কিন্তু এই পরাধীন বিবাহ প্রথা রক্ষা করিতে হইলে তাহার সঙ্গে সঙ্গে আবার আরো অনেকগুলি আনুষঙ্গিক প্রথা রক্ষা করিতে হয় ; যেমন বাল্যবিবাহ ও অবরোধপ্রথা ) যদি স্ত্রীলোকেরা অন্তঃপুরের বহির্দেশে বিচরণ করিতে পায়, ও অধিক বয়সে বিবাহ প্ৰথা প্রচলিত হয়, তবে অসবৰ্ণ বিবাহ আরম্ভ হইবেই যখন যৌবনকালে কুমার কুমারীযুগলের পরস্পরের প্রতি অনুরাগ জন্মাইকে, তখন কি পিতামাতার ও চিরন্তর প্রথার নীরস আদেশ তাহারা মানা করিবে ? DBDu BBJL DBDDBDB BBB SBB BBBB BBBSBBB BBDB DBBJD DDBuBBDB BBBLDB BBBSSS BBBLL অবস্থান হইলে উভয়ে এক রকম মিশ' খাইয়া যায়, বনিয়া যায় ; কিন্তু যখন পাত্র ও পাত্রী উভয়ে বয়স্ক উভয়েরই যখন চবিত্ৰ সংগঠিত ও মতামত স্থিরীকত হইয়া গিয়াছে ও কচি অবস্থার নমনীয়তা চলিয়া গিয়াছে ও পাকা-অবস্থার দৃঢ়তা জন্মিয়াছে, তখন আমন দুই বাক্তিকে অনুরাগ ব্যতীত আর কিছুতেই জুড়িতে পারে না--- না বাসসামী পা, ন’ বিবাহের মন্ত্র তাহাদেৱ যতই বলপূর্বক একত্ৰ করিতে চেষ্টা করিবে, ততই তাহার দ্বিগুণ বলে তফাত হইতে থাকিবে অনুরাগ করা তাহদের পক্ষে কর্তব্য কার্য বলিয়াই অনুরাগ করা তাহদের পক্ষে দ্বিগুণ দুঃসাধ্য হইয়া পড়িবে - অতএব যদি অসবর্ণ বিবাহ না দেও। তবে পর্বরাগ মলক বিবাহ দিয়ে না, বাল্যবিবাহ প্রচলিত থাক, অবরোধপ্রথা উঠাইয়ো ন তুমি যে, মনে করিতেছি সুবিধামত আমি সমাজ হইতে লোকাচারের একটি মাত্র ইট খসাইয়া লাইব । আর অধিক নয়।' তোমার কী ভ্ৰম ? ঐ একটি ইট খসিলে কতগুলি ইট খসিবে ও প্রাচীরে কতখানি ছিদ্র হইবে তােহা তুমি জান না । অতএব দেখা যাইতেছে দুই দল লোক সমাজসংস্কার করে ; এক- যাহারা লোকাচারকে একেবারে মল হইতে উৎপাটন করে, আর-- যাহা লোকাচারের একটি একটি করিয়া শিকড় কাটিয়া দেয় ও অবশেষে কপালে করাঘাত করিয়া বলে, ”এ কী হইল : গাছ শুকাইল কেন ?’ ইহাদের উভয়েরই আবশ্যক প্রথম দল যখন কোনো একটা লোকাচার আমূলত বিনাশ কবিতে চায়, তখন সমাজ কোমর বাধিয়া রুখিয়া দাড়ায়। কিন্তু তাহাই বলিয়া যে সংস্কারকদের সমস্ত প্ৰয়াস বিফল হয় তাহা নহে ; তাহার একটা ফল থাকিয়া যায়, মনে করো যেখানে অবরোধপ্রথা একেবারে তুচ্ছ করিয়া পাঁচ জন ংস্কারক তাহদের পত্নী দিগকে গাড়ি চড়াইয়া রাস্তা দিয়া লইয়া যান, সেখানে দশ জন স্ত্রীলোক পাষ্ট্ৰী চড়িয়া যাইবার সময় দরজা খুলিয়া রাখিলেও তাঁহাদের কেহ নিন্দা করে না! কেবল মাত্র যে তাহদের নিন্দা করে না, তাহা নহে; তাহদের লক্ষা করিয়া সকলে বলাবলি করে, “হা, এ তো বেশ! ইহাতে তো আমাদের কোনো আপত্তি নাই! কিন্তু মেয়েমানুষে গাড়ি চড়িবে সে কী ভয়ানক!! আপত্তি যে নাই, তাহার কারণ, আর পাচ জন গাড়ি চড়ে। নহিলে বিষম। আপত্তি হইত। সমাজ যখন দেখে দশ জন লোক হোটেলে গিয়া খানা খাইতেছে, তখন যে বিশ জন লোক ব্ৰাহ্মণকে দিয়া মুরগি রাধাইয়া খায়, তাহাদিগকে দ্বিগুণ আদরে বুকে তুলিয়া লয়। ইহাই দেখিয়া অদূরদশীগণ আমূল-সংস্কারকদিগকে