পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Հ রবীন্দ্র-রচনাবলী অনেকে বলেন, সমস্ত মনুষ্যজাতি সাধারণত কবি, ও বালকেরা অশিক্ষিত লোকেরা বিশেষরূপে কবি ; এ মতের পূর্বোক্ত মতটির ন্যায় তেমন বহুল প্রচার হয় নাই! তথাপি তর্ককালে অনেকেরই মুখে এ কথা শুনা যায়। বালকেরা যে কবি নয়, তাহার প্রমাণ পর্বেই দেওয়া হইয়াছে। তাহারা কবিতাময় ভাষায় ভােব প্রকাশ করে না। অনেকে কবিত্ব অনুভব করেন, কবিত্ব উপভোগ করেন, যদি-বা বলপূর্বক তুমি তাহাদিগকেও কবি বলো তথাপি বালকদিগকে কবি বলা যায় না। বালকের কবিত্ব অনুভব করে না, কবিত্ব উপভোগ করে না; অর্থাৎ, বয়স্ক লোকদের মতো করে না। অনুভব তো সকলেই করিয়া থাকে, পশুরাও তো সুখ দুঃখ অনুভব করে। কিন্তু কবিত্ব অনুভব কয়জন লোক করে ? যথার্থ সুন্দর ও যথার্থ কুৎসিত কয়জন ব্যক্তি পরখ করিয়া তফাত করিয়া দেখে ও বুঝে ? অধিকাংশ লোক সুন্দর চিনিতে ও উপভোগ করিতেই জানে না। সুন্দর বস্তু কেন সুন্দর তাহা বুঝিতে পারা, অন্য সমস্ত সুন্দর বস্তুর সহিত তুলনা করিয়া তাহাকে তাহার যথাযোগ্য আসন দেওয়া, একটা সুন্দর বস্তু হইতে দশটা সুন্দর বস্তুর কথা মনে পড়া, অবস্থা-বিভেদে একটি সুন্দর বস্তুর সৌন্দৰ্য-বিভেদ কল্পনা করিতে পাবা কি সকলের সাধা ? সকল চক্ষুই কি শরীরী পদার্থের মধ্যে অশরীরী কী-একটি দেখিতে পায়? অল্পই হউক আর অধিক হউক। কল্পনা তো সকলেরই আছে- উন্মাদগ্ৰস্ত ব্যক্তির অপেক্ষা কল্পনা কাহার আছে ? কল্পনা প্রবল হইলেই কবি হয় না। সুমার্জিত সুশিক্ষিত ও উচ্চ শ্রেণীর কল্পনা থাকা আবশ্যক { কল্পনাকে যথাপথে নিয়োগ করিবার নিমিত্ত বুদ্ধি ও রুচি থাকা আবশ্যক করে। পূৰ্ণচন্দ্ৰ যে হাসে, বা জ্যোৎস্না যে ঘুমায়, এ কয়জন বালকের কল্পনায় উদিত হয় z একজন বালক যদি অসাধারণ কাল্পনিক হয়, তবে পূৰ্ণচন্দ্রকে একটি আস্ত লুচি বা অর্ধচন্দ্রকে একটি ক্ষীরপুলি মনে করিতে পারে। তাহদের কল্পনা সুসংলগ্ন নহে; কাহার সহিত কাহার যোগ হইতে পারে, কোন কোন দ্রব্যকে পাশাপাশি বসাইলে পরস্পর পরস্পরের আলোকে অধিকতর পরিস্ফুট হইতে পারে, কোন দ্রব্যকে কি ভাবে দেখিলে তাহার মর্ম তাহার সৌন্দর্য চক্ষে বিকাশ পায়, এ-সকল জ্ঞানা অনেক শিক্ষার কাজ । একটি দ্রব্য অনেক ভাবে দেখা যাইতে পারে। বৈজ্ঞানিকেরা এক ভাবে জগৎ দেখেন, দার্শনিকেরা এক ভাবে দেখেন ও কবিরা আর এক ভাবে দেখেন। তিন জনে তিন প্রকার পদ্ধতিতে একই বস্তু দেখিতে পারেন । তুমি কি বলো উহার মধ্যে দুই প্রকার পদ্ধতি আয়ত্ত করিতে শিক্ষার আবশ্যক করে। আর তৃতীয়টিতে করে না ? শুদ্ধ করে না। তাহাই নয়, শিক্ষাতেই তাহার বিনাশ! কোন দ্রব্য কোন শ্রেণীর, কিসের সহিত তাহার ঐক্য ও কিসের সহিত তাহার অনৈক্য, তাহা সূক্ষ্মানুসূক্ষ্মীরূপে নিৰ্ণয় করা দার্শনিক বৈজ্ঞানিক ও কবি তিন জনেরই কাজ । তবে একটা দ্রব্যের তিনটি দিক আছে, তিন জন তিন বিভিন্ন দিকের ভার লইয়াছেন। তিন জনের মধ্যে এই মাত্র প্রভেদ, আর কিছু প্ৰভেদ আছে কি ? অনেক ভালো ভালো কবি যে ভাবের <f Tar Marlow- “Come, live with me and be my love"-ria's firji frtit ইহা লক্ষিত হয় :- হ’বি কি আমার প্ৰিয়া, রবি মোর সাথে ? অরণ্য, প্ৰান্তর, নদী, পর্বতগুহাতে যত কিছু, প্ৰিয়তমে, সুখ পাওয়া যায়, দু-জনে মিলিয়া তাহা ভোগ করি আয়! শুনিব শিখরে বসি পাখি গায় গান, নদীর শবদ-সাথে মিশাইয়া তান; দেখিব চাহিয়া সেই তটিনীর তীরে রাখাল গোরুর পাল চরাইয়া ফিরে।