পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS o রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা। পরিহাস বলে ঠেকছে। পালাবর তাৎপর্য কী । নটরাজ। পাছে এখানকার বুদ্ধিমানরা বলেন, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আরও দুঃখের বিষয়— যদি কিছু না বলে স্থা করে থাকেন। সভাকবি। এ তে বড়ো কৌতুক ! পাজিতে লিখছে পূর্ণিমা, এ দিকে চাদ মেরেছেন দৌড়, পাছে কেউ বলে বসে র্তার আলোটা ঝাপস । নটরাজ। বিশল্যকরণীটারই দরকার, গন্ধমাদনটা বাদ দিলেও চলে ! না’ই রইলেন কবি, গানগুলো রইল । সভাকবি। একটা ভাবনার বিষয় রয়ে গেল। গানে স্বয়ং কবিই সুর বসিয়েছেন নাকি । নটরাজ। তা নয় তে কী। ফুলে যিনি দিয়েছেন রঙ তিনিই লাগিয়েছেন গন্ধ । সভাকবি । সর্বনাশ ! নিজের অধিকারে পেয়ে এবার দেবেন রাগিণীর মাথ৷ হেঁট করে। বাণীকে উপরে চড়িয়ে দিয়ে বীণার ঘটাবেন অপমান। নটরাজ। অপমান ঘটানো একে বলে না, এ পরিণয় ঘটানে। রাগিণী যতদিন অনুঢ়া ততদিন তিনি স্বতন্ত্র। কাব্যের সঙ্গে বিবাহ হলেই তিনি কবিত্বের ছায়েবাতুগত। সপ্তপদীগমনের সময় কাব্যই যদি রাগিণীর পিছন পিছন চলে, সেটাকে বলব স্ত্রৈণের লক্ষণ । সেটা তোমাদের গৌড়ীয় পারিবারিক রীতি হতে পারে, কিন্তু রসরাজ্যের রীতি নয় । রাজা । ওহে কবি, কথাটা বোধ হচ্ছে যেন তোমাকেই লক্ষ্য করে । ঘরের খবর জানলে কী করে। সভাকবি । জনশ্রুতির পরে ভার, বানানে। কথায় লোকরঞ্জন করা । রাজা । জনশ্রুতিকে তা হলে কবি আখ্যা দিলে হয় । অলমতিবিস্তরেণ। যথারীতি কাজ আরম্ভ করে । সভাকবি । আমরা সহ্য করব ওঁদের স্বরবর্ষণ, মহাবীর ভীষ্মের মতো । নটরাজ। ধরণীর তপস্যা সার্থক হয়েছে, প্রণতি। রুদ্র আজ বন্ধুরূপ ধরেছেন, র্তার তৃতীয় নেত্রের জলদগ্নি দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করেছে শু্যামল জটাভার— প্রসন্ন তার মুখ । প্রথমে সেই বন্ধুদর্শনের আনন্দকে আজ মুখরিত করে। তপের তাপের বাধন কাটুক রসের বর্ষণে । হৃদয় আমার, স্যামল বঁধুর করুণ স্পর্শ নে । অঝোর-ঝরন শ্রাবণজলে তিমিরমেদুর বনাঞ্চলে ফুটুক সোনার কদম্বফুল নিবিড় হর্ষণে ।