পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণগাথা > > ○ সভাকবি । সত্য কথা বলি, মহারাজ। অনেক কবিত্ব করেছি, অমরুশতক পেরিয়ে শান্তিশতকে পৌছবার বয়স হয়ে এল— কিন্তু এই যে এর অশরীর বিরহের কথা বলেন যা নিরবলম্ব, এটা কেমন যেন প্রেতলোকের ব্যাপার বলে মনে হয় । রাজা। শুনলে তো, নটরাজ ! একটু মিলনের আভাস লাগাও, অন্তত দুর থেকে আশা পাওয়া যায় এমন আয়োজন করতে দোষ কণী । সভাকবি। ঠিক বলেছেন, মহারাজ। পাত পেড়ে বসলে ওঁদের মতে যদি কবিত্ববিরুদ্ধ হয়, অন্তত রান্নাঘর থেকে গন্ধটা বাতাসে মেলে দিতে দোষ কী । নটরাজ। বরমপি বিরহে ন সঙ্গমস্ত স্থা। পেটভর মিলনে স্থর চাপ পড়ে, একটু ক্ষুধা বাকি রাখা চাই, কবিরাজরা এমন কথা বলে থাকেন। আচ্ছা, তবে মিলনতরীর সারিগান বিরহবন্যার ও পার থেকে আসুক সজল হাওয়ায় । ধরণীর গগনের মিলনের ছন্দে বাদল-বাতাস মাতে মালতীর গন্ধে । উৎসবসভা-মাঝে শ্রাবণের বীণা বাজে, শিহরে শু্যামল মাটি প্রাণের আনন্দে । দুই কুল আকুলিয়৷ অধীর বিভঙ্গে নাচন উঠিল জেগে নদীর তরঙ্গে । কাপিছে বনের হিয়া বরষনে মুখরিয়া, বিজলি ঝলিয়া উঠে নবঘনমন্দ্রে ৷ রাজা। এ গানটাতে একটু উৎসাহ আছে। দেখছি, তোমার মৃদঙ্গওয়ালার হাত দুটো অস্থির হয়ে উঠেছে— ওকে একটু কাজ দাও । নটরাজ। এবার তা হলে একটা অশ্রত গীতচ্ছন্দের মূতি দেখা যাক । সভাকবি । শুনলেন ভাষাটা ! অশ্রত গীত ! নিরন্ন ভোজনের আয়োজন ! রাজা । দোষ দিয়ে না, যাদের যেমন রীতি । তোমাদের নিমন্ত্রণে অমিষের প্রাচুর্য । সভাকবি । অজ্ঞা হঁ৷ মহারাজ, আমরা আধুনিক, আমিষলোলুপ। নটরাজ । শু্যামলিয়া, দেহভঙ্গীর নিঃশবদ গানের জন্যে অপেক্ষা করছি । নাচ রাজা । অতি উত্তম । শূন্যকে পূর্ণ করেছ তুমি । এই নাও পুরস্কার। নটরাজ, তোমাদের পালাগানে একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখেছি, এতে বিরহের অংশটাই