পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী । ২৩৯ বিভা উৎসাহের সঙ্গে বললে, “নিশ্চয় আপনাকে যেতে হবে।” , অধ্যাপক একটুখানি হেসে বললেন, “আমার উপরওয়াল ধারা আমাকে ডেপুটেশনে পাঠাতে পারতেন তার রাজী নন, পাছে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। অতএব তাদের সেই উৎকণ্ঠা আমার ভালোর জন্যেই। তেমন কোনো বন্ধু যদি পাই যে লোকটা খুব বেশি সেয়ান নয়, তারই সন্ধানে আজ বেরব। ধারের বদলে যা বন্ধক দেবার আশা দিতে পারি সেটাকে না পারব দাড়িপাল্লায় চড়াতে, না পারব কষ্টিপাথরে ঘষে দেখাতে। আমরা বিজ্ঞানীরা কিছু বিশ্বাস করবার পূর্বে প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুজি, বিষয়বুদ্ধিওয়ালারাও খোজে— ঠকাবার জো নেই কাউকে।” । বিভা উত্তেজিত হয়ে বললে, “যেখান থেকে হোক, বন্ধু একজনকে বের করবই, হয়তো সে খুব সেয়ান নয়, সেজন্তে ভাববেন না।” দু-চার কথায় সমস্তার মীমাংসা হয় নি। সেদিনকার মতো একটা আধাখেচড়া নিপত্তি হল। অমরবাবু লোকটি মাঝারি সাইজের, তামবৰ্ণ, দেহটি রোগ, কপাল চওড়া, মাথার সামনেদিককার চুল ফুরফুরে হয়ে এসেছে। মুখটি প্রিয়দর্শন, দেখে বোঝা যায় কারও সঙ্গে শত্রুত করবার অবকাশ পান নি। চোখদুটিতে ঠিক অন্যমনস্কতা নয়, যাকে বলা যেতে পারে দূরমনস্কতা— অর্থাং রাস্তায় চলবার সময় ওঁকে নিরাপদ রাখবার দায়িত্ব বাইরের লোকদেরই। বন্ধু ওঁর খুব অল্পই, কিন্তু যে কজন আছে তার ওঁর সম্বন্ধে খুবই উচ্চ আশা রাখে, আর বাকি যে-সব চেনা লোক তার নাক সিটকে ওঁকে বলে হাইব্রাউ। কথাবার্তা অল্প বলেন, সেটাকে লোকে মনে করে হৃদ্যতারই স্বল্পত। মোটের উপর ওঁর জীবনযাত্রায় জনতা খুব কম। তার সাইকলজির পক্ষে আরামের বিষয় এই যে, দশজনে ওঁকে কী ভাবে সে উনি জানেনই না। অভীকের কাছে বিভা আজ তাড়াতাড়ি যে আটশে টাকা এনে দিয়েছিল সে একটা অন্ধ আবেগে মরিয়া হয়ে। বিভার নিয়মনিষ্ঠার প্রতি তার মামার বিশ্বাস অটল। কখনও তার ব্যত্যয় হয় নি। মেয়েদের জীবনে নিয়মের প্রবল ব্যতিক্রমের ঝটক হঠাৎ কোনদিক থেকে এসে পড়ে, তিনি বিষয়ী লোক সেটা কল্পনাও করতে পারেন নি । এই অকস্মাং অকাজের সমস্ত শাস্তি ও লজ্জা মনের মধ্যে স্পষ্ট করে দেখে নিয়েই একমুহূর্তের ঝড়ের ঝাপটে বিভা উপস্থিত করেছিল, তার উৎসর্গ অভাকের কাছে। প্রত্যাখ্যাত সেই দান আবার নিয়মের পিলপেগাড়ির মধ্যে