পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उिन नत्रौ २8१ আমার সংকল্প। আমি ভেবেছিলুম, ভারতীয়কেও কেজো করে তুলতে উৎসাহ হতেওঁ পারে। একটা কথা বুঝতে পারলুম, টাকাওয়ালার দরদ টাকাওয়ালাদেরই পরে ’ আর দেখলুম, এখানে চাকাতৈরির চক্রপথে শেখ। বেশি দূর এগোবে না। এই ; উপলক্ষ্যে একটা বিষয়ে চোখ খুলে গেল, সে হচ্ছে এই যে, যন্ত্রবিদ্যাশিক্ষার আরও... গোড়ায় যাওয়৷ চাই ; যন্ত্রের মালমসলা-সংগ্রহ শিখতে হবে । ধরণী শক্তিমানদের জন্তে জমা করে রেখেছেন তার দুর্গম জঠরে কঠিন খনিজ পদার্থ, এই নিয়ে দিগ্বিজয় করেছে তারা, আর গরিবদের জন্যে রয়েছে তার উপরের স্তরে ফসল—হাড় বেরিয়েছে তাদের পাজরায়, চুপসে গেছে তাদের পেট । আমি লেগে গেলুম খনিজবিদ্য শিখতে। ফোর্চ বলেছে ইংরেজ অকেজে, তার প্রমাণ হয়েছে ভারতবর্ষে– একদিন হাত লাগিয়েছিল তার নীলের চাষে আর-একদিন চায়ের চাষে– সিবিলিয়ানের দল দপ্তরখানায় তকমাপর “ল অ্যাও অর্ডর’-এর ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু ভারতের বিশাল অন্তর্ভাণ্ডারের সম্পদ উদঘাটিত করতে পারে নি, কী মানবচিত্তের কী প্রকৃতির । ব’সে বসে পাটের চাষীর রক্ত নিংড়েছে। জামশেদ টাটাকে সেলাম করেছি সমুদ্রের ওপার থেকে। ঠিক করেছি আমার কাজ পটক। ছোড়া নয়। সিদ্ধ কাটতে যাব পাতালপুরীর পাথরের প্রাচীরে। মায়ের আঁচলধর বুড়ে থোকাদের দলে মিশে মা মা ধ্বনিতে মস্তর পড়ব না, আর দেশের দরিদ্রকে অক্ষম অভূক্ত অশিক্ষিত দরিদ্র বলেই মানব, দরিদ্রনারায়ণ’ বুলি দিয়ে তার নামে মস্তর বানাব না। প্রথম বয়সে এ রকম বচনের পুতুলগড় খেল অনেক খেলেছি— কবিদের কুমোরবাড়িতে স্বদেশের যে রাংতা-লাগানো প্রতিমা গড়া হয়, তারই সামনে বসে বসে অনেক চোখের জল ফেলেছি। কিন্তু আর নয়, এই জাগ্রত বুদ্ধির দেশে এসে বাস্তবকে বাস্তব বলে জেনেই শুকনো চোখে কোমর বেঁধে কাজ করতে শিখেছি। এবার গিয়ে বেরিয়ে পড়বে এই বিজ্ঞানী বাঙাল কোদাল নিয়ে কুড়ুল নিয়ে হাতুড়ি নিয়ে দেশের গুপ্তধনের তল্লাসে, এই কাজটাকে কবির গদগদকণ্ঠের চেলার দেশমাতৃকার পূজা বলে চিনতেই পারবে না। ফোর্ডের কারখানাঘর ছেড়ে তার পরে ন’বছর কাটিয়েছি খনিবিদ্য৷ খনিজবিদ্যা শিখতে। যুরোপের নানা কেন্দ্রে ঘুরেছি, হাতেকলমে কাজ করেছি, দুই-একটা যন্ত্রকৌশল নিজেও বানিয়েছি— তাতে উৎসাহ পেয়েছি অধ্যাপকদের কাছে, নিজের উপরে বিশ্বাস হয়েছে, ধিক্কার দিয়েছি ভূতপূর্ব মন্ত্ৰমুগ্ধ অকৃতাৰ্থ নিজেকে। আমার ছোটোগল্পের সঙ্গে এই-সব বড়ো বড়ো কথার একান্ত যোগ নেই– বাদ দিলে চলত, হয়তো ভালোই হত। কিন্তু এই উপলক্ষ্যে একটা কথা বলার দরকার ছিল, সেটা বলি। যৌবনের গোড়ার দিকে নারীপ্রভাবের ম্যাগ নেটিজমে জীবনের