পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* তিন সঙ্গী ২৬৩ থেকে আমি পুরুষের উচ্চ গৌরব মনে-মনে মেনেছি, ককখনো মুখে স্বীকার করি নে ৷” । i “কিন্তু দিদি, আমার কোনো কথায় আমি মেয়েদের গৌরবের লাঘব করি 俞哈 '• “তুমি করবে? তুমি যে মেয়েদের অন্ধ ভক্ত, তোমার মুখের স্তবগান শুনে মনেমনে হাসি। মেয়ের নির্লজ্জ হয়ে সব মেনে নেয়। সস্তায় প্রশংসা আত্মসাৎ করা ওদের অভ্যেস হয়ে গেছে।” সেদিন এই যে কথাবার্তা হয়ে গেল, এ নেহাত হাস্যালাপ নয়। এর মধ্যে ছিল যুদ্ধের সূচনা। অচিরার স্বভাবের দুটাে দিক ছিল, আর তার ছিল দুটাে আশ্রয়। এক ছিল তাদের নিজেদের বাড়ি, আর ছিল সেই পঞ্চবটী । ওর সঙ্গে যখন আমার বেশ সহজ সম্বন্ধ হয়ে এসেছে, তখন স্থির করেছিলুম, ঐ পঞ্চবটীর নিভৃতে হাসিকৌতুকের ছলে আমার জীবনের সদ্যসংকটের কথা কোনো রকম করে তুলব এবং নিস্পত্তির দিকে নিয়ে যাব। কিন্তু ওখানে পথ বন্ধ। আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিনে প্রথম কথা যেমন মুখে আসছিল না, তেমনি এখানে ষে-অচিরা আছে তার কাছে প্রথম কথ নেই। মোকাবিলায় ওর চরম মনের কথায় পৌছবার কোনো উপায় খুজে পাই নে ওর ঘরের কাছে ওর সহাস্যমুখরতা রোধ করে দেয় আমার তরফের এক পা অগ্রগতি আর ওর নিভৃত বনচ্ছায়ায় আমার সমস্ত চাঞ্চল্য ঠেকিয়ে রেখেছে নির্বাক নিঃশব্দতায় । কোনো-কোনোদিন ওদের ওখানে চায়ের নিমন্ত্রণসভার একটা কোনো সীমানায় মন খোলবার স্থযোগ পাওয়া যায়, অচিরা বুঝতে পারে আমি বিপদমণ্ডলীর কাছাকাছি আসছি, সেইদিনই ওর বাক্যবাণবর্ষণের অবিরলতা অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠে। একটুও ফাক পাই নে, আর আবহাওয়াও হয়ে ওঠে প্রতিকূল। আমার মন হয়েছে অত্যন্ত অশান্ত, কাজের বাধা এমনি ঘটছে যে, আমি লজ্জা পাচ্ছি মনে-মনে । সদরে বাজেটের মিটিঙে আমার রিসর্চবিভাগে আরও কিছু টাকা মঞ্জুর করে নেবার প্রস্তাব আছে, তারই সমর্থক রিপোর্ট অর্ধেকের বেশি লেখা হয় নি। ইতিমধ্যে ক্রোচের এথেটিক্স সম্বন্ধে আলোচনা রোজ কিছুদিন ধরে শুনে আসছি। বিষয়টা সম্পূর্ণ আমার উপলব্ধির এবং উপভোগের বাইরে—সেকথ। অচিরা নিশ্চিত জানে। দাদুকে উৎসাহিত করে আর মনে-মনে হাসে । সম্প্রতি চলছে Behaviourism সম্বন্ধে যত বিরুদ্ধ যুক্তি আছে, তার ব্যাখ্যা । এই তত্ত্বালোচনার শোচনীয়তা হচ্ছে এই যে, অচিরা এই সময়টাতে ছুটি নিয়ে বাগানের কাজে চলে যায়, বলে, এ সব তর্ক পূর্বেই শুনেছি। আমি বোকার মতো বসে থাকি, মাঝে-মাঝে দরজার দিকে তাকাই।