পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় । ৩৫৫ ৷ পায় না। যা চিন্তা করতে মন অভিভূত হয়ে যায় এত বড়ে জিনিসকে দিকসীমানায় বন্ধ এই আকাশটুকুর মধ্যে আমাদের কাছে ধরা হল। 輸 কতই ছোটাে করে ধরা হয়েছে তার একটুখানি আন্দাজ পেতে হলে স্বর্ষের দৃষ্টান্ত মুনে আনতে হবে। স্বভাবতই আমরা যতকিছু বড়ে জিনিসকে জানি বা মনে জানতে পারি তার মধ্যে সব চেয়ে বড়ো এই পৃথিবী । এ-কে আমরা অংশ অংশ করেই দেখতে পারি। একসঙ্গে সবটার প্রকৃত ধারণা আমাদের বোধের পক্ষে অসম্ভব । অথচ সূর্য এই পৃথিবীর চেয়ে প্রায় তেরো লক্ষ গুণ বড়ো। এতবড়ো স্বৰ্ষ আকাশের একটা ধারে আমাদের কাছে দেখা দিয়েছে একটি সোনার থালার মতো। সূর্যের ভিতরকার সমস্ত তুমুল তোলপাড়ের যখন খবর পাই আর তার পরে যখন দেখি ভোরবেলায় আমাদের আমবাগানের পিছন থেকে সোনার গোলকটি ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসছে, জীবজন্তু গাছপালা আনন্দিত হয়ে উঠছে, তখন মনে ভাবি আমাদের কীরকম ভুলিয়ে রাখা হয়েছে ; আমাদের বলে দিয়েছে তোমাদের জীবনের কাজে এর বেশি জানবার কোনো দরকার নেই। না ভোলালেই বা বাচতুম কী করে। ঐ স্বৰ্ষ আপন বিরাট স্বরূপে যা, সে যদি আমাদের অনুভূতির অল্পমাত্রও কাছে আসত তা হলে তো আমরা মুহূর্তেই লোপ পেয়ে যেতুম। এই তো গেল স্বর্য। এই সুর্যের চেয়ে আরও অনেক গুণ বড়ো আছে আরও অনেক অনেক নক্ষত্র। তাদের দেখছি কতকগুলি আলোর ফুটকির মতো। যে-দুরত্বের মধ্যে এইসব নক্ষত্র ছড়ানো, ভেবে তার কিনারা পাওয়া যায় না। বিশ্বজগতের বাসা যে আকাশটাতে সেট যে কত বড়ো সেকথা আর-একদিক থেকে ভেবে দেখা যেতে পারে। আমাদের তাপবোধে পৃথিবীর বাইরে থেকে একটা খুব বড়ো খবর খুব জোরের সঙ্গে এসে পেচচ্ছে, সে হচ্ছে রৌদ্রের উত্তাপ। এ খবরটা নকোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল দূরের। কিন্তু ঐ তো আকাশে আকাশে আছে বহুকোটি নক্ষত্র, তাদের মধ্যে কোনো-কোনোটি স্বর্ষের চেয়ে বহুগুণ বেশি উত্তপ্ত। কিন্তু আমাদের ভাগ্যগুণে তাদের সম্মিলিত গরম পথেই এতটা মারা গেল যে বিশ্বজোড়া অগ্নিকাণ্ডে আমাদের আকাশটা দুঃসহ হল না। কত দূরের এই পথ, কত প্রকাও এই আকাশ। তাপের অনুভূতিকে স্পৰ্শ-করা নকোটি মাইল তার কাছে তুচ্ছ। বড়ো যজ্ঞের রান্নাঘরে যে চুলি জলছে তার কাছে বসা আরামের নয়, কিন্তু বেলা দশটার কাছাকাছি শহরের সমস্ত রান্নাঘরে যে আগুন জ্বলে বড়ে আকাশে তা ছড়িয়ে যায় বলেই শহরে বাস করতে পারি। নক্ষত্ৰলোকের ব্যাপারটাও সেইরকম। সেখানকার আগুনের ঘটা যতই প্রচণ্ড হোক, তার চার দিকের আকাশটা আরও অনেক প্রকাও ৷