পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি o, ❖ ኃዓ মুখটি ঝরিয়া লম্বা হইয়া একটি বিশেষত্ব লাভ করিয়াছে, তাহার গালছটি পূর্বের শুীমাভ চিৰণত ত্যাগ করিয়া কোমল পাণ্ডুবর্ণ হইয়া আসিয়াছে, এখন তাহার গতিবিধিভাবভঙ্গিতে কোনোপ্রকার জড়তা নাই । আজ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া যখন সে ঋজুদেহে ঈষৎ-বঙ্কিম-মুখে খোলা জানালার সম্মুখে দাড়াইল, তাহার মুখের উপরে শরৎমধ্যাহের আলো আসিয়া পড়িল, তাহার মাথায় কাপড় নাই, অগ্রভাগে লাল ফিতার গ্রন্থিবাধা বেণীটি পিঠের উপরে পড়িয়াছে, ফিকে হলদে রঙের মেরিনোর শাড়ি তাহার ফুটনোমুখ শরীরকে আঁটিয়া বেষ্টন করিয়াছে— তখন রমেশ তাহার দিকে কিছুক্ষণ চাহিয়৷ চুপ করিয়া রহিল। n কমলার সৌন্দর্য এই কয় মাসে রমেশের মনে আবছায়ার মতে হইয়া আসিয়াছিল, আজ সেই সৌন্দর্ধ নবতর বিকাশ লাভ করিয়া হঠাৎ তাহাকে চমক লাগাইয়া দিল । সে যেন ইহার জন্য প্রস্তুত ছিল না । রমেশ কহিল, “কমলা, বোসে।” কমলা একটা চৌকিতে বসিল । রমেশ কহিল, “ইস্কুলে তোমার পড়াশুনা কেমন চলিতেছে ?” কমলা অত্যন্ত সংক্ষেপে কহিল, “বেশ ।” 嘯 রমেশ ভাবিতে লাগিল, “এইবার কী বলা যাইবে । হঠাৎ একটা কথা মনে পড়িয়া গেল ; কহিল, “বোধ হয় অনেকক্ষণ খাও নাই। তোমার খাবার তৈরি আছে । এইখানেই আনিতে বলি ?” কমলা কহিল, “খাইব না, আমি খাইয়া আসিয়াছি।” রমেশ কহিল, “একটু কিছু খাইবে না ? মিষ্ট না খাও তো ফল আছে—আতা, আপেল, বেদান৷ ” কমলা কোনো কথা না বলিয়া ঘাড় নাড়িল । রমেশ আর-একবার কমলার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল। কমলা তখন ঈষৎ মুখ নত করিয়া তাহার ইংরাজিশিক্ষার বহি হইতে ছবি দেখিতেছিল। স্বন্দর মুখ সোনার কাঠির মতো নিজের চারি দিকের স্বপ্ত সৌন্দর্যকে ‘জাগাইয়া তোলে। শরতের আলোক হঠাৎ যেন প্রাণ পাইল, আশ্বিনের দিন যেন আকার ধারণ করিল । কেন্দ্র যেমন তাহার পরিধিকে নিয়মিত করে— তেমনি এই মেয়েটি আকাশকে, বাতাসকে, আলোককে আপনার চারি দিকে যেন বিশেষভাবে জাকৰ্ষণ করিয়া আনিল— অথচ সে নিজে ইহার কিছুই না জানিয়া চুপ করিয়া বসিয়া তাহার, পড়িবার বইয়ের ছবি দেখিতেছিল । o