পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশ তাড়াতাড়ি উঠিয়া গিয়া একটা থালায় কতকগুলি আপেল, নাসপাতি, বেদান লইয়া উপস্থিত করিল। কহিল, “কমলা, তুমি তো খাবে না দেখিতেছি, কিন্তু আমার ক্ষুধা পাইয়াছে, তামি তো আর সবুর করিতে পারি না।” শুনিয়া কমলা একটুখানি হাসিল। এই অকস্মাৎ হাসির আলোকে উভয়ের ভিতরকার কুয়াশা যেন অনেকখানি কাটিয়া গেল। রমেশ ছুরি লইয়া আপেল কাটিতে লাগিল। কিন্তু কোনোপ্রকার হাতের কাজে রমেশের কিছুমাত্র দক্ষতা নাই। তাহার এক দিকে ক্ষুধার আগ্রহ, অন্য দিকে এলোমেলো কাটিবার ভঙ্গি দেখিয়া বালিকার ভারি হাসি পাইল— সে খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল । রমেশ এই হাস্তোচ্ছাসে খুশি হইয়া কহিল, “আমি বুঝি ভালো কাটিতে পারি না, তাই হাসিতেছ? আচ্ছা, তুমি কাটিয়া দাও দেখি, তোমার কিরূপ বিদ্যা।” কমলা কহিল, "বঁটি হইলে আমি কাটিয়া দিতে পারি, ছুরিতে পারি না।” রমেশ কহিল, “তুমি মনে করিতেছ, বটি এখানে নাই ?” চাকরকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বঁটি আছে?” সে কহিল, “আছে— রাত্রের আহারের জন্য সমস্ত আনাহইয়াছে।” রমেশ কহিল, “ভালো করিয়া ধুইয়া একটা বঁটি লইয়া আয়।” চাকর বঁটি লইয়া আসিল । কমলা জুতা খুলিয়া বঁটি পাতিয়া নীচে বসিল এবং হাসিমূপে নিপুণহস্তে ঘুরাইয়া ঘুরাইয় ফলের খোসা ছাড়াইয়া চাকলা চাকলা করিয়া কাটিতে লাগিল। রমেশ তাহার সম্মুখে মাটিতে বসিয়া ফলের খণ্ডগুলি থালায় ধরিয়া লইল । রমেশ কহিল, “তোমাকেও থাইতে হইবে।” কমলা কহিল, “না।” রমেশ কহিল, “তবে আমিও খাইব না।” কমলা রমেশের মুখের উপরে দুই চোখ তুলিয়া কহিল, “আচ্ছা, তুমি জাগে খাও, তার পরে আমি খাইব ।” রমেশ কহিল, “দেখিয়ো, শেষকালে ফাকি দিয়ে না।” কমলা গম্ভীরভাবে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, “না, সত্যি বলিতেছি, ফাকি দিব না।” বালিকার এই সত্যপ্রতিজ্ঞায় আশ্বস্ত হইয়া রমেশ থালা হইতে এক টুকরা ফল লইয়া মুখে পুরিয়া দিল । হঠাৎ তাহার চিবানো বন্ধ হইয়া গেল। হঠাৎ দেখিল, তাহার সম্মুখেই দ্বারের বাহিরে যোগেন্দ্র এবং অক্ষয় আসিয়া উপস্থিত।