পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রশ্নটা করা ঠিক সংগত হয় নাই। তাহা হইলে এখন হইতে রাধিবার যোগাড় করা ষাক— কী বল ?” এই বলিয়া রমেশ চলিয়া গেল এবং সন্ধান করিয়া এক লোহার উকুন সংগ্ৰহ করিল। শুধু তাই নয়, কাশী পৌছাইয়া দিবার খরচ ও বেতনের প্রলোভনে উমেশ বলিয়া'এক কায়স্থবালককে জল তোলা, বাসন মাজা প্রভৃতি কাজের জন্য নিযুক্ত করিল। রমেশ কহিল, “কমলা, আজ কী রান্না হইবে ?” কমলা কহিল, “তোমার তো ভারি যোগাড় আছে ! এক ডাল আর চাল— আজ খিচুড়ি হইবে।” রমেশ খালাসিদের নিকট হইতে কমলার নির্দেশমত মসলা সংগ্ৰহ করিয়া আনিল । রমেশের অনভিজ্ঞতায় কমলা হাসিয়া উঠিল, কহিল “শুধু মসলা লইয়া কী করিব ? শিল-নোড়া নহিলে বাটিব কী করিয়া ? তুমি তো বেশ ” বালিকার এই অবজ্ঞা বহন করিরা রমেশ শিল-নোড়ার সন্ধানে ছুটিল। শিল-নোড়া না পাইয়া খালাসিদের কাছ হইতে এক লোহার হামানদিস্তা ধার করিয়া আনিল । হামানদিস্তায় মসলা কোটা কমলার অভ্যাস ছিল না। অগত্যা তাহাই লইয়া বসিতে হইল। রমেশ কহিল, "মসলা নাহয় আর কাহাকেও দিয়া পিষাইয়া আনিতেছি।” কমলার তাহা মনঃপূত হইল না । সে নিজেই উৎসাহসহকারে কাজ আরম্ভ করিল। এই অনভ্যস্ত প্রণালীর অস্থবিধাতে তাহার কৌতুকবোধ হইল। মসলা লাফাইয়া উঠিয়া চারি দিকে ছিটকাইয়া পড়ে, আর সে হাসি রাখিতে পারে না। তাহার এই হাসি দেখিয়া রমেশেরও হাসি পায় । এইরূপে মসলা কোটার অধ্যায় শেষ করিয়া কোমরে আঁচল জড়াইয়া একটা দরমাঘেরা জায়গায় কমলা রান্না চড়াইয়া দিল। কলিকাতা হইতে একটা হাড়িতে করিয়া সন্দেশ আনা হইয়াছিল, সেই হাড়িতেই কাজ চালাইয়া লইতে হইল। রান্না চড়াইয়া দিয়া কমলা রমেশকে কহিল, “তুমি যাও, শীঘ্ৰ স্নান করিয়া লও - আমার রান্না হইতে বেশি দেরি হইবে না।” 蠱 রান্নাও হইল, রমেশও স্বান করিয়া আসিল । এখন প্রশ্ন উঠিল, থাল তো নাই, কিসে খাওয়া যায় ? у রমেশ অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে কহিল, “খালাসিদের কাছ হইতে সানকি ধার করিয়া জানা যাইতে পারে।”