পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミbro রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশকে বাহিরের ঘরেই থাকিতে হয় ; কমলার সহিত তাহার সাক্ষাতের সুযোগ হয় না । এই অনিবার্য বিচ্ছেদব্যাপার লইয়া শৈলজা কেবলই কমলার কাছে দুঃখপ্রকাশ করিতে লাগিল। কমলা কহিল, "কেন ভাই, তুমি এত হাহুতাশ করিতেছ? এমনি কী ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে!” শৈলজা হাসিয়া কহিল, “ইস, তাই তো ! একেবারে যে পাষাণের মতো কঠিন মন। ও-সব ছলনায় আমাকে ভুলাইতে পরিবে না। তোমার মনের মধ্যে যে কী হইতেছে সে কি আর আমি জানি না !” কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা ভাই, সত্যি করিয়া বলো, দুই দিন যদি বিপিনবাবু তোমাকে দেখা না দেন তা হইলে কি অমনি—” শৈলজা সগর্বে কহিল, “ইস, দুই দিন দেখা না দিয়া তার নাকি থাকিবার জো আছে !” এই বলিয়া বিপিনবাবুর অধৈর্য সম্বন্ধে শৈলজা গল্প করিতে লাগিল । প্রথম-প্রথম বিবাহের পর বালক বিপিন গুরুজনের বৃহভেদ করিয়া তাহার বালিকা-বধুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য কবে কতপ্রকার কৌশল উদ্ভাবন করিয়াছিল, কবে ব্যর্থ হইয়াছিল, কবে ধরা পড়িয়াছিল, দিবাসাক্ষাৎকারের নিষেধদুঃখ-লাঘবের জন্য বিপিনের মধ্যাহ্নভোজনকালে একটা আয়নার মধ্যে গুরুজনদের অজ্ঞাতে উভয়ের কিরূপ দৃষ্টিবিনিময় চলিত, তাহা বলিতে বলিতে পুরাতন স্মৃতির আনন্দকৌতুকে শৈলজার মুখখানি হাস্তে উদভাসিত হইয়া উঠিল। তাহার পরে যখন আপিসে যাইবার পালা আরম্ভ হইল, তখন উভয়ের বেদনা এবং বিপিনের যখন-তখন আপিস-পলায়ন, সেও অনেক কথা। তাহার পরে এক বার শ্বশুরের ব্যবসায়ের খাতিরে কিছুদিনের জন্য বিপিনের পাটনায় যাইবার কথা হয়, তখন শৈলজা তাহার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, ‘তুমি পাটনায় গিয়া থাকিতে পারিবে ? বিপিন স্পর্ধা করিয়া বলিয়াছিল, কেন পারিব না, খুব পারিব।” সেই স্পর্ধাবাক্যে শৈলজার মনে খুব অভিমান হইয়াছিল ; সে প্রাণপণে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, বিদায়ের পূর্বরাত্রে সে কোনোমতে লেশমাত্র শোকপ্রকাশ করিবে না ; কেমন করিয়া সে প্রতিজ্ঞ হঠাৎ চোখের জলের প্লাবনে ভাসিয়া গেল এবং পরদিনে যখন যাত্রার আয়োজন সমস্তই স্থির তখন বিপিনের অকস্মাৎ এমনি মাথা ধরিয়া কী-এক-রকমের অস্বথ করিতে লাগিল যে, যাত্রা বন্ধ করিতে হইল, তাহার পরে ডাক্তার যখন ওষুধ দিয়া গেল, তখন সে ওষুধের শিশি গোপনে নর্দমার মধ্যে শূন্ত করিয়া অপূর্ব উপায়ে কী করিয়া ব্যাধির অবসান হইল—