পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ২৮৭ কি কোনো পুরস্কার নাই ? বিদায়ের আগে গোপনে এক বার কলুটোলার খবর লইয়। আসিলে ক্ষতি কী ? আজ কলুটোলার সেই গলিতে যাওয়া স্থির করিয়া সে একখানা চিঠি লিখিতে বসিল । তাহাতে কমলার সহিত তাহার সম্বন্ধ আস্তোপাস্ত বিস্তারিত করিয়া লিখিল । এবারে গাজিপুরে ফিরিয়া গিয়া সে অগত্যা হতভাগিনী কমলাকে নিজের পরিণীতপত্নীরূপে গ্রহণ করিবে তাহাও জ্ঞাপন করিল। এইরূপে হেমনলিনীর সহিত তাহার সর্বতোভাবে বিচ্ছেদ ঘটিবার পূর্বে সত্য ঘটনা সম্পূর্ণভাবে জানাইয়া এই পত্র-দ্বারা সে বিদায় গ্রহণ করিল। চিঠি লিথিয়া লেফাফার মধ্যে পুরিয়া উপরে কাহারও নাম লিখিল না, ভিতরেও কাহাকেও সম্বোধন করিল না । অন্নদাবাবুর ভূত্যেরা রমেশের প্রতি অনুরক্ত ছিল— কারণ রমেশ, হেমনলিনীর সম্পৰ্কীয় স্বজন-পরিজন সকলকে একটা বিশেষ মমতার সহিত দেখিত । এইজন্য সেই বাড়ির চাকর-বাকরেরা রমেশের নিকট হইতে নানা উপলক্ষে কাপড়চোপড় পার্বণী হইতে বঞ্চিত হইত না। রমেশ ঠিক করিয়াছিল, সন্ধ্যার অন্ধকারে কলুটোলার বাড়িতে গিয়া এক বার সে দূর হইতে হেমনলিনীকে দেখিয়া আসিবে এবং কোনো এক জন চাকরকে দিয়া এই চিঠি গোপনে হেমনলিনীর হাতে পৌছাইয়া দিয়া সে চিরকালের মতো তাহার পূর্ববন্ধন বিচ্ছিন্ন করিয়া চলিয়া যাইবে । সন্ধ্যার সময় রমেশ চিঠিখানি হাতে লইয়া সেই চিরপরিচিত গলির মধ্যে স্পন্দিতবক্ষে কম্পিতপদে প্রবেশ করিল। দ্বারের কাছে আসিয়া দেখিল দ্বার রুদ্ধ ; উপরে চাহিয়া দেখিল সমস্ত জানলা বন্ধ, বাড়ি শূন্ত, অন্ধকার । তৰু রমেশ দ্বারে ঘা দিল। দুই-চার বার আঘাত করিতে করিতে ভিতর হইতে এক জন বেহার দ্বার খুলিয়া বাহির হইল। রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “কে ও, স্থখন নাকি ?” বেহার কহিল, “ই বাবু, আমি স্থখন।” রমেশ । বাবু কোথায় গেছেন ? বেহীরা। দিদিঠাকরুনকে লইয়া পশ্চিমে হাওয়া খাইতে গিয়াছেন। রমেশ । কোথায় গেছেন ? বেহারা। তাহা তো বলিতে পারি না। রমেশ । আর কে সঙ্গে গেছেন ? বেহার। নলিনবাবু সঙ্গে গেছেন।