পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি Woo S কমলা তাহার দুই জোড়া শাড়ি বাহির করিয়া উমেশের কাছে ফেলিয়া দিয়া কহিল, “এই নে, যা, পরিস।” শাড়ির চওড়া বাহারে পাড় দেখিয়া উমেশ অত্যন্ত উৎফুল্ল হইয়া উঠিল, কমলার পায়ের কাছে পড়িয়া ঢিপ করিয়া প্ৰণাম করিল, এবং হাস্তদমনের বৃথা চেষ্টায় সমস্ত মুখখানাকে বিকৃত করিয়া চলিয়া গেল। উমেশ চলিয়া গেলে কমলা দুই ফোট চোখের জল মুছিয়া জানলার কাছে চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। শৈল ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল, “ভাই কমল, আমাকে তোর চিঠি দেখাবি নে ?” কমলার কাছে শৈলর তো কিছুই গোপন ছিল না, তাই শৈল এতদিন পরে সুযোগ পাইয়া এই দাবি করিল। কমলা কহিল, “ওই-যে দিদি, দেখে-না।” বলিয়া, মেজের উপরে চিঠি পড়িয়া ছিল, দেখাইয়া দিল । শৈল আশ্চর্ষ হইয়া ভাবিল, ‘বাস রে, এখনো রাগ যায় নাই!’ মাটি হইতে শৈল চিঠি তুলিয়া লইয়া সমস্তটা পড়িল। চিঠিতে ভালোবাসার কথা যথেষ্ট আছে বটে, কিন্তু তবু এ কেমনতরো চিঠি ! মানুষ আপনার স্ত্রীকে এমনি করিয়া চিঠি লেখে ! এ যেন কী-এক-রকম ! শৈল জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা ভাই, তোমার স্বামী কি নভেল লেখেন ?” “স্বামী” শব্দটা শুনিয়া চকিতের মধ্যে কমলার দেহমন যেন সংকুচিত হইয়া গেল। সে কহিল, “জানি না।” শৈল কহিল, “তা হলে আজ তুমি বাংলাতেই যাইবে ?” কমলা মাথা নাড়িয়া জানাইল যে, যাইবে। শৈল কহিল, “আমিও আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকিতে পারিতাম, কিন্তু জান তো ভাই, আজ নরসিংবাবুর বউ আসিবে। মা বরঞ্চ তোমার সঙ্গে যান।” কমলা ব্যস্ত হইয়া কহিল, “না না, মা গিয়া কী করিবেন ? সেখানে তো চাকর আছে।” শৈল হাসিয়া কহিল, “আর তোমার বাহন উমেশ আছে, তোমার ভয় কী ?” উমা তখন কাহার একটা পেনসিল সংগ্ৰহ করিয়া যেখানে-সেখানে আঁচড় কাটিতেছিল এবং চীৎকার করিয়া অব্যক্ত ভাষা উচ্চারণ করিতেছিল, মনে করিতেছিল ‘পড়িতেছি । শৈল তাহার এই সাহিত্যরচনা হইতে তাহাকে বলপূর্বক কাড়িয়া লইল ; সে যখন প্রবল তারস্বরে আপত্তিপ্রকাশ করিল কমলা বলিল, *একটা মজার জিনিস দিতেছি আয় ।” এই বলিয়া ঘরে লইয়া গিয়া তাহাকে বিছানার উপর ফেলিয়া আরে বাবা