পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

८नौकांफूवेि \ტ¢\ტ এখন সাধন করিবার বয়স ? যদি বল “তুমি কেন বরাবর এই-সব লইয়া আছ, তার একটু কথা আছে। আমার বাপ-মা বড়ো নিষ্ঠাবান ছিলেন। ছেলেবেলা হইতে আমরা ভাইবোনেরা এই-সকল শিক্ষার মধ্যেই মানুষ হইয়া উঠিয়াছি। এ যদি আমরা ছাড়ি তো আমাদের দ্বিতীয় কোনো আশ্রয় থাকে না। কিন্তু তোমরা তো সেরকম নও ; তোমাদের শিক্ষাদীক্ষা তো সমস্তই আমি জানি । তোমরা এ যা-কিছু করিতেছ এ কেবল জোর করিয়া করিতেছ ; তাহাতে লাভ কী মা ? যে যাহা পাইয়াছে সে তাহাই ভালো করিয়া রক্ষা করিয়া চলুক, আমি তো এই বলি। না না, ও-সব কিছু নয়, ও-সমস্ত ছাড়ে । তোমাদের আবার নিরামিষ খাওয়া কি, যোগ-তপই বা কিসের । আর নলিনই বা এতবড়ো গুরু হইয়া উঠিল কবে ? ও এ-সকলের কী জানে ? ও তো সেদিন পর্যন্ত যা-খুশি-তাই করিয়া বেড়াইয়াছে, শাস্ত্রের কথা শুনিলে একেবারে মারমূর্তি ধরিত। আমাকেই খুশি করিবার জন্য এই সমস্ত আরম্ভ করিল, শেষকালে দেখিতেছি কোনদিন পূরা সন্ন্যাসী হইয়া বাহির হইবে। আমি ওকে বার বার করিয়া বলি, ছেলেবেলা হইতে তোর যা বিশ্বাস ছিল তুই তাই লইয়াই থাক ; সে তো মন্দ কিছু নয়, আমি তাহাতে সস্তুষ্ট বৈ অসন্তুষ্ট হইব না ’ শুনিয়া নলিন হাসে ; ওই ওর একটি স্বভাব, সকল কথাই চুপ করিয়া শুনিয়া যায়, গাল দিলেও উত্তর করে না।” অপরাহ্লে পাচটার পর হেমনলিনীর চুল বাধিয়া দিতে দিতে এই-সমস্ত আলোচনা চলিত। হেমের খোপা-বাধা ক্ষেমংকরীর পছন্দ হইত না । তিনি বলিতেন, “তুমি বুঝি মনে করে মা, আমি নিতান্তই সেকেলে, এখনকার কালের ফ্যাশান কিছুই জানি না। কিন্তু আমি যতরকম চুল-বাধা জানি এত তোমরাও জান না বাছা। একটি বেশ ভালো মেম পাইয়াছিলাম, সে আমাকে সেলাই শিথাইতে আসিত, সেই সঙ্গে কতরকম চুল-বাধাও শিখিয়াছিলাম। সে চলিয়া গেলে আবার আমাকে স্নান করিয়া কাপড় ছাড়িতে হইত। কী করিব মা, সংস্কার, উহার ভালোমন্দ জানি না— না করিয়া থাকিতে পারি না । তোমাদের লইয়াও যে এতটা ছুই-ছুই করি, কিছু মনে করিয়ো না মা। ওটা মনের ঘৃণা নয়, ও কেবল একটা অভ্যাস। নলিনদের বাড়িতে যখন অন্তরূপ মত হইল, হিন্দুয়ানি ঘুচিয়া গেল, তখন তো আমি অনেক সহ করিয়াছি, কোনো কথাই বলি নাই ; আমি কেবল এই কথাই বলিয়াছি যে, যাহা ভালো বোঝ করো— আমি মুখ মেয়েমানুষ, এতকাল যাহা করিয়া আসিলাম তাহ ছাড়িতে পারিব ब्रां ।” W. A. বলিতে বলিতে ক্ষেমংকরী চোখের এক ফোট জল তাড়াতাড়ি আঁচল দিয়া