পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি \రి:Sల ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আচ্ছা, আমি তোমাকে সেলাই শিখাইয়া দিব।” ক্ষেমংকরী জিজ্ঞাসা করিলেন, “পড়িতে জান তো ?” কমলা কহিল, “ই, জানি।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “সে হইল ভালো। চোখে তো আর চশমা নহিলে দেখিতে পাই না, তুমি আমাকে পড়িয়া শোনাইতে পরিবে।” কমলা কহিল, “আমি রাধাবাড়ী-ঘরকন্নার কাজ সমস্ত শিথিয়াছি।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “অমন অন্নপূর্ণার মতে চেহারা, তুমি যদি রাধাবাড়ার কাজ না জানিবে তো কে জানিবে। আজ পর্যন্ত নলিনকে আমি নিজে রাধিয়া খাওয়াইয়াছি— আমার অস্থখ হইলে বরঞ্চ স্বপাক রাধিয়া খায়, তবু আর কাহারও হাতে খায় না। এবার হইতে তোমার কল্যাণে তাহার স্বপাক খাওয়া আমি ঘোচাইব । আর, অক্ষম হইয়া পড়িলে আমাকেও যদি চারটিখানি হবিন্যান্ন রাধিয়া খাওয়াও তো আমার তাহাতে অনভিরুচি হইবে না। চলো মা, তোমাকে আমার ভাড়ার-ঘর রান্নাঘর সমস্ত দেখাইয়া আনি।” 鬱 এই বলিয়া ক্ষেমংকরী র্তাহার ক্ষুদ্র ঘরকন্নার সমস্ত নেপথ্যগৃহ কমলাকে দেখাইলেন। কমলা ইতিমধ্যে একটা অবকাশ বুঝিয়া আস্তে আস্তে আপনার দরখাস্ত জারি করিল। কহিল, “মা, আমাকে আজকে রাধিতে দাও-না।” ক্ষেমংকরী একটুখানি হাসিলেন । কহিলেন, “গৃহিণীর রাজত্ব ভাড়ারে আর রান্নাঘরে— জীবনে অনেক জিনিস ছাড়িতে হইয়াছে, তবু ওটুকু সঙ্গে সঙ্গে লাগিয়াই আছে। তা মা, আজকের মতো তুমিই রাধো— দুই-চারি দিন যাক, ক্রমে সমস্ত ভার আপনিই তোমার হাতে পড়িবে ; আমিও ভগবানে মন দিবার সময় পাইব । বন্ধন একেবারেই তো কাটে না— এখনো দুই-চারি দিন মন চঞ্চল হইয়া থাকিবে, ভাড়ারঘরের সিংহাসনটি কম নয়।” f এই বলিয়া ক্ষেমংকরী, কী রণধিতে হইবে, কী করিতে হইবে, কমলাকে সমস্ত উপদেশ দিয়া পূজাগৃহে চলিয়া গেলেন । ক্ষেমংকরীর কাছে আজ কমলার ঘরকন্নার পরীক্ষা আরম্ভ হইল । কমলা তাহার স্বাভাবিক তৎপরতার সহিত রন্ধনের সমস্ত আয়োজন প্রস্তুত করিয়া, কোমরে জাচল জড়াইয়া, মাথায় এলোচুল ঝুটি করিয়া লইয়া, রাধিতে প্রবৃত্ত হইল। নলিনাক্ষ বাহির হইতে বাড়িতে ফিরিলেই প্রথমে তাহার মাকে দেখিতে যাইত। তাহার মাতার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে চিস্তা তাহাকে কখনোই ছাড়িত না। আজ বাড়িতে প্রবেশ করিবামাত্র রান্নাঘরের শব্দ এবং গন্ধ তাহাকে আক্রমণ করিল। মা এখন