পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ 8 סוף যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু তাহারও অনেক আগে কোনো এক আদিযুগে আমরা নিশ্চয়ই শাখী ছিলাম, তাহা কি ভুলিতে পারিয়াছি ? সেই আদিকালের জনহীন মধ্যাহ্নে আমাদের ডালপালার মধ্যে বসন্তের বাতাস কাহাকেও কোনো খবর না দিয়া যখন হঠাং হু হু করিয়া আসিয়া পড়িত, তখন কি আমরা প্রবন্ধ লিখিয়াছি না দেশের উপকার করিতে বাহির হইয়াছি ? তখন আমরা সমস্ত দিন খাড়া দাড়াইয়া মুকের মতো, মূঢ়ের মতো, কঁাপিয়াছি ; আমাদের সর্বাঙ্গ ঝরঝর মর্মর করিয়া পাগলের মতো গান গাহিয়াছে ; আমাদের শিকড় হইতে আরম্ভ করিয়া প্রশাখাগুলির কচি ডগা পর্যস্ত রসপ্রবাহে ভিতরে ভিতরে চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। সেই আদিকালের ফাঙ্কনচৈত্র এমনিতরো রসে-ভরা আলস্তে এবং অর্থহীন প্রলাপেই কাটিয়া যাইত। সেজন্য কাহারও কাছে কোনো জবাবদিহি ছিল না । যদি বল অনুতাপের দিন তাহার পরে আসিত, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের খরা চুপ করিয়া মাথা পাতিয়া লইতে হইত, সে কথা মানি। যেদিনকার যাহা সেদিনকার তাহা এমনি করিয়াই গ্রহণ করিতে হয় । রসের দিনে ভোগ, দাহের দিনে ধৈর্য যদি সহজে আশ্রয় করা যায়, তবে সাৰনার বর্ষাধারা যখন দশ দিক পূর্ণ করিয়া ঝরিতে আরম্ভ করে তখন তাহা মজ্জায় মজ্জায় পুরাপুরি টানিয়া লইবার সামর্থ্য থাকে । কিন্তু এ-সব কথা বলিবার অভিপ্রায় আমার ছিল না। লোকে সন্দেহ করিতে পারে, রূপক আশ্রয় করিয়া আমি উপদেশ দিতে বসিয়াছি। সন্দেহ একেবারেই অমূলক বলা যায় না। অভ্যাস খারাপ হইয়া গেছে। আমি এই বলিতেছিলাম যে, অভিব্যক্তির শেষ কোঠায় আসিয়া পড়াতে মানুষের মধ্যে অনেক ভাগ ঘটিয়াছে। জড়ভাগ, উদ্ভিদভাগ, পশুভাগ, বর্বরভাগ, সভ্যভাগ, দেবভাগ ইত্যাদি। এই ভিন্ন ভিন্ন ভাগের এক-একটা বিশেষ জন্মঋতু আছে। কোন ঋতুতে কোন ভাগ পড়ে তাহ নির্ণয় করিবার ভার আমি লইব না। একটা সিদ্ধাস্তকে শেষ পর্যন্ত মিলাইয়া দিব পণ করিলে বিস্তর মিথ্যা বলিতে হয়। বলিতে রাজি আছি ; কিন্তু এত পরিশ্রম আজ পারিব না । আজ, পড়িয়া পড়িয়া, সম্মুখে চাহিয়া চাহিয়া যেটুকু সহজে মনে আসিতেছে, সেইটুকুই লিখিতে বসিয়াছি। দীর্ঘ শীতের পর আজ মধ্যাহ্নে প্রাস্তরের মধ্যে নববসন্ত নিশ্বসিত হইয়া উঠিতেই নিজের মধ্যে মচুন্যজীবনের ভারি একটা অসামঞ্জস্ত অনুভব করিতেছি। বিপুলের সহিত, সমগ্রের সহিত তাহার স্বর মিলিতেছে না। শীতকালে আমার উপরে?