পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ 8b-4 হইতে যতগুলো বিবেচনা ও যুক্তি সংগ্রহ সম্ভব সমস্ত নিঃশেষে আকর্ষণ করিয়া লইয়া আমাদের সঙ্গে গাড়িতে উঠিয়া বসিলেন। । সকালবেলায় কলিকাতার রাস্তা যে বিশেষ স্থদৃপ্ত তাহা নহে, বিশেষত চিংপুর রোড। সকালবেলাকার প্রথম স্বৰ্যকিরণ পড়িয়াছে, খাকরা গাড়ির আস্তাবলের মাথায় আর এক-সার বেলোয়ারি ঝাড়ওয়ালা মুসলমানদের দোকানের উপর। গ্যাসল্যাম্পগুলোর গায়ে স্বর্ষের আলো এমনি চিক্‌মিক্‌ করিতেছে সে দিকে চাহিবার জো নাই। সমস্ত রাত্রি নক্ষত্রের অভিনয় করিয়া তাহাদের সাধ মেটে নাই, তাই সকালবেলায় লক্ষ যোজন দূর হইতে স্থৰ্যকে মুখ ভেঙাইয়া অতিশয় চকচকে মহত্বলাভের চেষ্টায় আছে। ট্রামগাড়ি শিস দিতে দিতে চলিয়াছে, কিন্তু এখনো যাত্রী বেশি জোটে নাই। মুনিসিপালিটির শকট কলিকাতার আবর্জনা বহন করিয়া, অত্যস্ত মন্থর হইয়া চলিয়া যাইতেছে । ফুটপাথের পার্থে সারি সারি শুকরা গাড়ি আরোহীর অপেক্ষায় দাড়াইয়া ; সেই অবসরে অশ্বচর্মাবৃত চতুষ্পদ কঙ্কালগুলো ঘাড় হেঁট করিয়া অত্যস্ত শুকনো ঘাসের আঁটি অন্যমনস্কভাবে চিবাইতেছে ; তাহদের সেই পারমার্থিক ভাব দেখিলে মনে হয় যে, অনেক ভাবিয়া-চিন্তিয় তাহারা তাহাদের সম্মুখস্থ ঘাসের আঁটির সঙ্গে সমস্ত জগৎসংসারের তুলনা করিয়া সারবত্তা ও সরসতা সম্বন্ধে কোনো প্রভেদ দেখিতে পায় নাই। দক্ষিণে মুসলমানের দোকানের হৃতচর্ম খাসির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কতক দড়িতে ঝুলিতেছে, কতক খণ্ড খণ্ড আকারে শলাকা আশ্রয় করিয়া অগ্নিশিখার উপরে ঘুর থাইতেছে এবং বৃহৎকায় রক্তবর্ণ কেশবিহীন শ্মশ্রলগণ বড়ো বড়ো হাতে মস্ত মস্ত রুটি সেকিয়া তুলিতেছে। কাবাবের দোকানের পাশে ফুকো ফানুষ নির্মাণের জায়গা, অনেক ভোর হইতেই তাহদের চুলায় আগুন জালানো হইয়াছে। ঝাপ খুলিয়া কেহ বা হাত-মুখ ধুইতেছে, কেহ বা দোকানের সম্মুখে ঝাট দিতেছে, দৈবাং কেহ বা লাল কলপ-দেওয়া দাড়ি লইয়া চোখে চশমা অণটিয়া একখানা পার্সি কেতাব পড়িতেছে। সম্মুখে মসজিদ ; একজন অন্ধ ভিক্ষুক মসজিদের সিড়ির উপরে হাত পাতিয়া দাড়াইয়া ज्रटिष्ट्र । গঙ্গার ধারে কয়লাঘাটে গিয়া পৌছানো গেল। সম্মুখ হইতে ছাউনিওয়ালা বাধা নৌকাগুলা দৈত্যদের পায়ের মাপে বড়ো বড়ো চটজুতার মতো দেখাইতেছে। মনে হইতেছে, তাহারা যেন হঠাৎ প্রাণ পাইয়া অনুপস্থিত চরণগুলি স্মরণ করিয়া চট্‌ চট্‌ করিয়া চলিবার প্রতীক্ষায় অধীর হইয়া পড়িয়াছে। একবার চলিতে পাইলে হয়, এইরূপ তাহদের ভাব। একবার উঠতেছে, যেন উচু হইয়া ডাঙার দিকে চাহিয়া দেখিতেছে কেহ আসিতেছে কি না, আবার নামিয়া পড়িতেছে। একবার আগ্রহে