পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QSV রবীন্দ্র-রচনাবলী তোমায় বুঝি হারাই আমিআমায় তুমি হারাবে না বুঝেছি আজ রাতে । যে নিশীথে আপন হাতে নিবিয়ে দিলেম আলো তারই মাঝে তুমি তোমার ধ্রুবতারা জ্বালো । . তোমার পথে চলা যখন ঘুচে গেল, দেখি তখনআপনি তুমি আমার পথে লুকিয়ে চল সাথে ৷ সুদৰ্শন। ও কে ও ! চেয়ে দেখ সুরঙ্গমা, এত রাত্রে এই আঁধার পথে আরো একজন পথিক বেরিয়েছে যে ! সুরঙ্গমা। মা, এ যে কান্ধীর রাজা দেখছি। সুদৰ্শনা । কাঞ্চীর রাজা ? সুরঙ্গম । ভয় কোরো না মা ! সুদৰ্শনা । ভয় ! ভয় কেন করব। ভয়ের দিন আমার আর নেই। কান্ধীরাজ । (প্ৰবেশ করিয়া) মা, তুমিও চলেছ বুঝি ? আমিও এই এক পথেরই পথিক । আমাকে কিছুমাত্র ভয় কোরো না । সুদৰ্শনা। ভালোই হয়েছে কান্ধীরাজ, আমরা দুজনে তার কাছে পাশাপাশি চলেছি, এ ঠিক হয়েছে। ঘর ছেড়ে বেরোবার মুখেই তোমার সঙ্গে আমার যোগ হয়েছিল, আজ ঘরে ফেরবার পথে সেই যোগই যে এমন শুভযোগ হয়ে উঠবে তা আগে কে মনে করতে পারত। কাঞ্চী । কিন্তু মা, তুমি যে হেঁটে চলেছ এ. তো তোমাকে শোভা পায় না । যদি অনুমতি কর তা হলে এখনই রথ আনিয়ে দিতে পারি । সুদৰ্শনা। না না, অমন কথা বোলো না- যে পথ দিয়ে তার কাছ থেকে দূরে এসেছি সেই পথের সমস্ত ধুলোটা পা দিয়ে মাড়িয়ে মাড়িয়ে ফিরব, তবেই আমার বেরিয়ে আসা সার্থক হবে । রথে করে নিয়ে গেলে আমাকে ফাকি দেওয়া হবে । - সুরঙ্গমা। মহারাজ, তুমিও তো আজ ধূলোয় । এ পথে তো হাতি ঘোড়া রথ কারও দেখি নি । সুদৰ্শনা। যখন রানী ছিলুম তখন কেবল সোনারুপোর মধ্যেই পা ফেলেছি, আজ র্তার ধুলোর মধ্যে চলে আমার সেই ভাগ্যদোষ খণ্ডিয়ে নেব । আজ আমার সেই ধুলোমাটির রাজার সঙ্গে পদে পদে এই ধুলোমাটিতে মিলন হচ্ছে- এ সুখের খবর কে জানত । সুরঙ্গমা। রানীমা, ঐ দেখো, পূর্ব দিকে চেয়ে দেখো, ভোর হয়ে আসছে। আর দেরি নেই মাতার প্রাসাদের সোনার চূড়ার শিখর দেখা যাচ্ছে। 5R ভোর হল বিভােবরী, পথ হল অবসান । শুন ওই লোকে লোকে উঠে আলোকেরই গান । ধন্য হলি ওরে পান্থ, রজনী জাগরক্লান্ত, ধন্য হল মারি মারি ধুলায় ধূসর প্রাণ । সমীরণ জাগিয়াছে । মধুভিক্ষু সারে সারে আগত কুঞ্জের দ্বারে ।