পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় brYWe) হৃদয়ে যে সাহিত্যরসপিপাসা আছে। এ গ্রন্থ পাঠে তাহার কতটা পরিতৃপ্তি হইল। “এক হিসাবে সে কাজটা সহজ, এক হিসাবে শক্তও বটে। আলোচ্য গ্রন্থের কোনো-এক অনালোকিত গোপন প্রান্ত হইতে কোনাে একটা তত্ত্বকথা যদি সমুলে উৎপাটিত করিয়া আনা যায়। তবে সেইটাকে অবলম্বন করিয়া সংগত এবং অসংগত অনেক কথা বলিয়া লওয়া সহজ হয় । “কিন্তু ভালো লাগিল। এ কথাটা বড়ো শীঘ্ৰ শেষ হইয়া যায়, সেটাকে একটা রীতিমত প্ৰবন্ধকারে প্রতিষ্ঠিত করিয়া তোলা সকল সময়ে সুসাধ্য বোধ হয় না । “আবার, যখন ভালো লাগে, তখন, কেন ভালো লাগে, কেমন করিয়া ভালো লাগে, তাহার চেতনা থাকে না- উচ্ছসিত সংক্ষিপ্ত হর্ষধ্বনি ছাড়া মুখ দিয়া আর-কিছু বাহির হয় না। হয় । ‘আমি নিজেকে জেরা করিয়া অবশেষে একটা নূতন উপমা প্রাপ্ত হইয়াছি। সেইটা দিয়া সুমুলুঙ্গুন আরম্ভ করিব মনে করিতেছি। লিখিতে লিখিতে যদি আরো কিছু মনে পড়ে তাে পরে “সাহিত্যরণরঙ্গভূমে কোনো মহারথী ভীমের মতো গদাযুদ্ধ করেন, আবার কেহ বা সব্যসাচী অর্জনের মতো কোদণ্ডে ক্ষিপ্ৰহস্ত । কেহ বা প্ৰকাণ্ড ভার লইয়া পাঠকের মস্তকের উপর নিপাতিত করেন, কেহ বা মুহুর্তের মধ্যে পুচ্ছবান অসংখ্যা লঘু শরসমূহে উক্ত নিরুপায় নিঃসহায় । ব্যক্তির একেবারে মর্মস্থল বিদ্ধ করিয়া ফেলেন । “সাহিত্যকুরুক্ষেত্রে বঙ্কিমবাবু সেই মহাবীর অর্জন । তাহার বিদ্যুৎগামী শরজাল দশ দিক আচ্ছন্ন করিয়া ছুটিতেছে- তাহারা অত্যন্ত লঘু, কিন্তু লক্ষ্য বিদ্ধ করিতে মুহুর্তকাল বিলম্ব করে कीं ।” ১৩০৫ সালের আশ্বিন মাসের ভারতী পত্রে ‘সাকার ও নিরাকার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৩০৫ সালের মাঘ মাসের ভারতী পত্রে “নিরাকার উপাসনা’ প্ৰবন্ধ প্ৰকাশিত হয়, উহাকে পূর্বোক্ত সাকার ও নিরাকার প্রবন্ধের অনুবৃত্তি বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে। বর্তমান খণ্ডের পরিশিষ্টে উহা মুদ্রিত হইল। “সাকার ও নিরাকার, প্রবন্ধের ভারতীতে প্রকাশিত কিন্তু আধুনিক সাহিত্যে বর্জিত অংশ* এখানে উদধূত করা যাইতে পারে "ইহা স্বাভাবিক। দেবতাকে যদি নিজের মতো করিয়াই গড়ি তবে এক কালের গড়া দেবতাকে লইয়া আর-এক কালের তৃপ্তি হইতে পারে না। তবে দেশকলপাত্রভেদে নব নব বিকার দেবচরিত্রে প্রবেশ করিবেই। অথচ এই সকল বিকার সত্ত্বেও যে আমাদের ভক্তির হ্রাস হয় না। সে আমাদের মানসিক জড়ত্ব এবং সে আমাদের দুৰ্গতির এক কারণ। ‘ভক্তি আমাদিগকে ভক্তিভাজনের দিকে অগ্রসর করে, অলক্ষিতভাবে সেই আদর্শ আমাদের মনকে গড়িয়া তোলে। এইজন্য যে-সকল উদ্ধত লোক আপনার চেয়ে কাহাকেও বড়ো বলিয়া জানে না তাহারা বাহিরে অহংকারে স্ফীত হয়, কিন্তু ভিতরে তাহার প্রকৃতি আপন সংকীর্ণ কারাগারে বদ্ধ থাকে । “আমরা উলটা দিকে যাই। দেবতার আদর্শে নিজেকে গড়িবার চেষ্টা না করিয়া নিজের আদর্শে দেবতাকে গড়িয়া তুলি। এবং ভক্তিপ্রবণ-স্বভাব-বশত সে দেবতাকে ভক্তিও করি । তাহাতে ভক্তিপ্রবৃত্তির চালনা-বশত সুখ পাই সন্দেহ নাই, কিন্তু ভক্তির চরম সফলতা হইতে । বঞ্চিত হই । ২৬ পৃ. ৬০৫, শেষ ছত্রের পূর্বে।