পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

l রামচন্দ্র রায় উঠিয় বসিয়া ধীরে ধীরে বিভার মাথাটি লইয়া কোলের উপর রাখিলেন, তাহার অশ্রজল মুছাইয়া দিলেন । এমন সময়ে দ্বারে কে আঘাত করিল। রামচন্দ্র বলিয়া উঠিলেন, “কে ও ?” বাহির হইতে উত্তর আসিল, “অবিলম্বে দ্বার খোলো ।” দশম পরিচ্ছেদ রামচন্দ্র রায় শয়নকক্ষের দ্বার উদঘাটন করিয়া বাহিরে আসিলেন । রাজপ্তালক রমাপতি কহিলেন, “বাবা, এখনই পালাও, মুহূর্ত বিলম্ব করিয়ো না।” * সেই রাত্রে সহসা এই কথা শুনিয়া রামচন্দ্র রায় একেবারে চমকিয়া উঠিলেন, তাহার মুখ সাদা হইয়া গেল, রুদ্ধ নিশ্বাসে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন, কেন, কী হইয়াছে ?” “কী হইয়াছে তাহ বলিব না, এখনই পালাও ।” বিভা শষ্য ত্যাগ করিয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মামা, কী হইয়াছে ?” রমাপতি কহিলেন, “সে-কথা তোমার শুনিয়া কাজ নাই, মা " । বিভার প্রাণ কাদিয়া উঠিল। সে একবার বসস্ত রায়ের কথা ভাবিল, একবার উদয়াদিত্যের কথা ভাবিল। বলিয়া উঠিল, “মামা, কী হইয়াছে বলে ।” রমাপতি তাহার কথার কোনো উত্তর না দিয়া রামচন্দ্রকে কহিলেন, “বাবা, অনর্থক কালবিলম্ব হইতেছে। এই বেলা গোপনে পালাইবার উপায় দেখো ।” হঠাৎ বিভার মনে একটা দারুণ অশুভ আশঙ্কা জাগিয়া উঠিল । গমনোদ্যত মাতুলের পথরোধ করিয়া কহিল, “ওগো তোমার দুটি পায়ে পড়ি, কী হইয়াছে বলিয়া যাও।” * রমাপতি সভয়ে চারিদিকে চাহিয়া কহিলেন, “গোল করিস নে বিভা চুপ কর, আমি সমস্তই বলিতেছি ।” ዄ যখন রমাপতি একে একে সমস্তটা বলিলেন, তখন বিভা একেবারে চীংকার করিয়া উঠিবার উপক্রম করিল। রমাপতি তাড়াতাড়ি তাহার মুখ চাপিয়া ধরিলেন— কহিলেন, “চুপ, চুপ, সর্বনাশ করিস নে।” বিভা রুদ্ধশ্বাসে অধ্রুদ্ধস্বরে সেইখানে বসিয়া পড়িল । রামচন্দ্র রায় সকাতরে কছিলেন, “এখন আমি কী উপায় করিব ? পালাইবার কী পথ আছে, আমি তো কিছুই জানি না - * §