পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট 8、4 উদয়াদিত্য কছিলেন, “রামমোহন, কী উপায় করিলে ?” রামমোহন কহিল, “আপনার শ্ৰীচরণাশীর্বাদে এই লাঠিই উপায় । আর মা কালীর চরণ ভরসা।” উদয়াদিত্য ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন, “ও উপায় কোনো কাজের নয়। আচ্ছা রামমোহন, তোমাদের নৌকা কোন দিকে আছে ?” রামমোহন কহিলেন, “রাজবাটীর দক্ষিণ পাশ্বের খালে।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “চলে একবার ছাদে যাই ।” রামমোহনের মাথায় হঠাৎ একটা উপায় উদ্ভাবিত হইল—সে কহিল, “হা, ঠিক কথা, সেইখানে চলুন।” Q সকলে প্রাসাদের ছাদে উঠিলেন। ছাদ হইতে প্রায় সত্তর হাত নিচে খাল। সেই খালে রামচন্দ্রের চৌষট্টি দাড়ের নৌকা ভাসিতেছে। রামমোহন কহিল, রামচন্দ্র রায়কে, পিঠে বাধিয়া লইয়া সে সেইখানে বাপাইয়া পড়িবে। বসন্ত রায় তাড়াতাড়ি শশব্যস্ত হইয়া রামমোহনকে ধরিয়া বলিয়া উঠিলেন, “না না না, সে কি হয় ? রামমোহন, তুমি অমন অসম্ভব কাজ করিতে যাইয়ো না।” 疊 বিভা চমকিয়া সত্রাসে বলিয়া উঠিল, “ন মোহন, তুই ও কী বলিতেছিল।” রামচন্দ্র বলিলেন, “না রামমোহন, তাহা হইবে না।” তখন উদয়াদিত্য অস্তঃপুরে গিয়া কতকগুলা খুব মোটা বৃহং চাদর সংগ্ৰহ করিয়া আনিলেন। রামমোহন সেগুলি পাকাইয়া বাধিয়া বাধিয়া একটা প্রকাও রজ্জ্বর মতো প্রস্তুত করিল। যেদিকে নৌকা ছিল, সেইদিককার ছাদের উপরের একটি ক্ষুদ্র স্তম্ভের সহিত রজ্জ্ব বঁধিল । রজ্জ্ব নৌকার কিঞ্চিৎ উর্ধ্বে গিয়া শেষ হইল। রামমোহন রামচন্দ্র রায়কে কহিল, “মহারাজ, আপনি আমার পিঠ জড়াইয়া ধরিবেন, আমি রজ্জ বাহিয়া নামিয়া পড়িব ।” রামচন্দ্র তাহাতে অগত্যা সম্মত হইলেন। তখন রামমোহন সকলকে একে একে প্রণাম করিল ও সকলের পদধূলি লইল, কহিল, “জয় মা কালী।” রামচন্দ্রকে পিঠে তুলিয়া লইল, রামচন্দ্র চোখ বুজিয়া প্রাণপণে তাহার পিঠ অঁাকড়িয়া ধরিলেন। বিভার দিকে চাহিয়া রামমোহন কহিল, “মা, তবে আমি চলিলাম । তোমার সস্তান থাকিতে কোনো ভয় করিয়ো না ।” রামমোহন রজ্জ্ব অঁাকড়িয়া ধরিল। বিভা স্তম্ভে ভর দিয়া প্রাণপণে দাড়াইয়া রছিল। বৃদ্ধ বসন্ত রায় কম্পিত চরণে দাড়াইয়া চোখ বুজিয়া “দুৰ্গা” “দুর্গ।” জপিতে লাগিলেন। রামমোহন রজু বাহিয়া নামিয়া রজ্জ্বর শেষ প্রাস্তে গেল। তখন সে হাত ছাড়িয়া দাত দিয়া রজ্জ্ব কামড়াইয়া ধরিল ও রামচন্দ্রকে পৃষ্ঠ হইতে ছাড়াইয়া দুই