পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ミや রবীন্দ্র-রচনাবলী হন্তে ঝুলাইয়া অতি সাবধানে নৌকায় নামাইয়া দিল ও নিজেও লুtফাইয়া পড়িল । রামচজ যেমন নৌকায় নামিলেন অমনি মূৰ্ছিত হইলেন। রামচন্দ্র যেমন নৌকায় নামিলেন, অমনি বিভা গভীর ও সুদীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলির মূৰ্ছিত হইয়া পড়িল । বসস্ত রায় চোখ মেলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "দাদা, কী হইল ?” উদয়াদিত্য মূৰ্ছিত বিভাকে সস্নেহে কোলে করিয়া অন্তঃপুরে চলিয়া গেলেন । সুরমা উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কছিল, “এখন তোমার কী হইবে ?” উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমার জন্ত আমি ভাবি না ।” এদিকে নৌকা খানিক দূর গিয়া অষ্টক পড়িল । বড়ো বড়ো শাল কাঠে খাল বদ্ধ। এমন সময়ে সহসা প্রহরীরা দূর হইতে দেখিল, নৌকা পলাইয়া যায়। পাথর ছুড়িতে আরম্ভ করিল, একটাও গিয়া পৌছিল না। প্রহরীদের হাতে তলোয়ার ছিল, বন্দুক ছিল না। এক জন বন্দুক আনিতে গেল । খোজ খোজ করিয়া বন্দুক জুটিল তো চকমকি জুটিল না। “ওরে বারুদ কোথায়— গুলি কোথায়” করিতে করিতে রামমোহন ও অনুচরগণ কাঠের উপর দিয়া নৌকা টানিয়া তুলিয়া লইয়া গেল। প্রহরীগণ অনুসরণ করিবার জন্য একটা নৌকা ডাকিতে গেল। যাহার উপরে নৌকা ডাকিবার ভার পড়িল পথের মধ্যে সে হরি মুদির দোকানে এক ছিলিম তামাক খাইয়া লইল ও রামশংকরকে তাহার বিছানা হইতে উঠাইয় তাহার পাওনা টাকা শীঘ্ৰ পাইবার জন্ত তাগাদ করিয়া গেল। যখন নৌকার প্রয়োজন একেবারে ফুরাইল তখন হাকডাক করিতে করিতে নৌকা আসিল । বিলম্ব দেখিয়া সকলে নৌকা-আহবানকারীকে সুদীর্ঘ ভৎসন করিতে আরম্ভ করিল। সে কহিল, “আমি তো আর ঘোড়া নই।” একে একে সকলের যখন ভংগনা করা ফুরাইল, তখন তাহদের চৈতন্ত হইল যে নৌকা ধরিবার আর কোনো সম্ভাবনা নাই। নৌকা আনিতে যে বিলম্ব হইয়াছিল, ভৎসনা করিতে তাহার তিন গুণ বিলম্ব হইল। যখন রামচন্দ্রের নৌকা ভৈরব নদে গিয়া পৌছিল তখন ফর্মাণ্ডিজ এক তোপের আওয়াজ করিল। প্রত্যুষে প্রতাপাদিত্যের নিদ্রাকর্ষণ হইয়াছিল। সেই তোপের শব্দে সহসা ঘুম ভাঙিয়া গেল । তিনি ডাকিয়া উঠিলেন, "প্রহরী।” কেহই আসিল লা। স্বারের প্রহরীগণ সেই রাত্রেই পালাইয়া গেছে প্রতাপাদিত্য উচ্চতর স্বরে ডাকিলেন, “প্রহরী ।”