পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Hම් রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়াছি ? একখানি পত্র না, একটি লোকও আসিল না, কাহারও মুখে সংবাদ শুনিতে পাই না। আমি কী করিব ? বুক ফাটিয়া ছটফট করিয়া সমস্ত দিন ঘরে ঘরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছি, কেহ তোমার সংবাদ বলে না, কাহারও মুখে তোমার নাম শুনিতে পাই না। মা গো মা, দিন কী করিয়া কাটিবে।" এমন কত দিন গেল । এমন কত মধ্যাহ্নে কত অপরাহ্লে কত রাত্রে সঙ্গিহীন বিভা রাজবাড়ির শূন্ত ঘরে ঘরে একখানি শীর্ণ ছায়ার মতো ঘুরিয়া বেড়ায়। এমন সময় একদিন প্রাতঃকালে রামমোহন আসিয়া “মা গো জয় হোক” বলিয়া প্রণাম করিল, বিভা এমনই চমকিয়া উঠিল, যেন তাহার মাথায় একটা মুখের বঞ্জ ভাঙিয়া পড়িল । তাহার চোখ দিয়া জল বাহির হইল। সে সচকিত হইয়া কহিল, “মোহন, তুই এলি।” 帝 بهد

  • হা মা, দেখিলাম, মা আমাদের ভুলিয়া গেছেন, তাহাকে একবার স্মরণ করাইয়া আসি ।”

বিভা কত কী জিজ্ঞাসা করিবে মনে করিল কিন্তু লজ্জায় পারিল না— বলে বলে করিয়া হইয়া উঠিল না, অথচ শুনিবার জন্য প্রাণটা আকুল হইয়া রহিল। রামমোহন বিভার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “কেন মা, তোমার মুখখানি অমন মলিন কেন ? তোমার চোখে কালি পড়িয়াছে। মুখে হাসি নাই। চুল রুক্ষ। এস মা, আমাদের ঘরে এল। এখানে বুঝি তোমাকে যত্ন করিবার কেহ নাই।” বিভা মান হালি হাসিল, কিছু কহিল না। হাসিতে হাসিতে হাসি আর রহিল। না। দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল— শীর্ণ বিবর্ণ দুটি কপোল প্লাবিত করিয়া জল পড়িতে লাগিল, অশ্রু আর থামে না । বহুদিন অনাদরের পর একটু আদর পাইলে যে অভিমান উথলিয়া উঠে, বিতা সেই অতিকোমল মৃদ্ধ অনন্তপ্রতিপূর্ণ অভিমানে কাদিয়া ফেলিল। মনে মনে কহিল, “এতদিন পরে কি আমাকে মনে *क्लिन्न ?* রামমোছন আর থাকিতে পারিল না, তাহার চোখে জল আসিল, কহিল, “এ কী অলক্ষণ। মা লক্ষ্মী, তুমি হাসিমুখে আমাদের ঘরে এস। আজ শুভদিনে চোখের জল মোছে।” মহিষীর মনে মনে ভয় ছিল, পাছে জামাই তার মেয়েকে গ্রহণ না করে। রামমোহন বিভাকে লইতে আসিয়াছে শুনিয়া তাহার অত্যস্ত আনন্দ হইল। তিনি রামমোহনকে ডাকাইয়া জামাইবাড়ির কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশেষ যত্নে রামমোহনকে আহার করাইলেন, রামমোহনের গল্প শুনিলেন, আনন্দে দিন কাটিল ।