পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন রামমোহন নতশির তুলিয়া ঈষং গর্বিতভাবে কহিল, “ও-কথা বলিৰেন না। প্রতাপাদিত্য যদি না দিত, আমি কাড়িয়া আনিতাম। আপনার কাছে তাহা তো বলিয়াই গিয়াছিলাম। মহারাজ, যখন আপনার আদেশ পালন করিতে যাই, তখন কি আর প্রতাপাদিত্যকে ভয় করি ? প্রতাপাদিত্য রাজা বটে, কিন্তু আমার রাজা তো সে নয় ।” রাজা কহিলেন, “তবে হইল না কেন ?” রামমোহন অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল, তাহার চোখে জল দেখা দিল । রাজা অধীর হইয়া কহিলেন, “রামমোহন, শীঘ্র বল!” 季 রামমোহন জোড়হাতে কহিল, “মহারাজ—” রাজা কহিলেন, “কী বল ।” রামমোহন । মহারাজ, মা-ঠাকরুন আসিতে চাহিলেন না।” বলিয়া রামমোহনের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। বুঝি এ সন্তানের অভিমানের অশ্র । বোধ করি এ অশ্রুজলের অর্থ— "মায়ের প্রতি আমার এত বিশ্বাস ছিল যে, সেই বিশ্বাসের জোরে আমি বুক ফুলাইয়া আনন্দ করিয়া মাকে আনিতে গেলাম আর মা আসিলেন না, মা আমার সম্মান রাখিলেন না।” কী জানি কী মনে করিয়া বৃদ্ধ রামমোহন চোখের জল সামলাইতে পারিল না। রাজা কথাটা শুনিয়াই একেবারে দাড়াইয়া উঠিয়া চোখ পাকাইয়া বলিয়া উঠিলেন, “বটে।” অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাহার আর বাক্যক্ষুতি হইল না। “আসিতে চাহিলেন না, বটে ! বেটা, তুই বেরে, বেরে, আমার সম্মুখ হইতে এখনই বেরো ।” রামমোহন একটি কথা না কহিয়া বাহির হইয়া গেল । সে জানিত তাহারই সমস্ত দোষ, অতএব সমুচিত দণ্ড পাওয়া কিছু অন্যায় নহে। রাজা কী করিয়া ইহার শোধ তুলিবেন কিছুতেই ভাবিয়া পাইলেন না। প্রতাপাদিত্যের কিছু করিতে পারিবেন না, বিভাকেও হাতের কাছে পাইতেছেন না। রামচন্দ্র রায় অধীর হইয়া বেড়াইতে লাগিলেন। & দিন-দুয়েকের মধ্যে সংবাদটা নানা আকারে নানা দিকে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল । এমন অবস্থা হইয়া দাড়াইল যে, প্রতিশোধ না লইলে আর মুখ রক্ষা হয় না। এমন কি, প্রজার পর্যন্ত প্রতিশোধ লইবার জন্য ব্যস্ত হইল । তাহারা কহিল, “আমাদের মহারাজার অপমান ।” অপমানটা যেন সকলের গায়ে লাগিয়াছে। একে তো প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি রামচন্দ্র রায়ের মনে স্বভাবতই বলবান আছে, তাহার উপরে