পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ጎbr রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া কছিলেন, “হইবে আর কী ?” ്' মহিষী। “এই মনে করে। যদি জামাই বিভাকে একেবারে ত্যাগ করে।” বলিয়া মহিষী রুদ্ধকণ্ঠ হইয়া কাদিতে লাগিলেন। 輕 প্রতাপাদিত্য অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। তাহার চোখ দিয়া অগ্নিকণা বাহির হইল । মহারাজের সেই মূর্তি দেখিয়া মহিষী চোখের জল মুছিয়া তাড়াতাড়ি কহিলেন, “তাই বলিয়া জামাই কি আর সত্য সত্যই লিখিয়াছে যে, ওগো তোমাদের বিভাকে আমি ত্যাগ করিলাম, তাহাকে আর চন্দ্রদ্বীপে পাঠাইয়ো না, তাহা নহে—তবে কথা এই, যদি কোনোদিন তাই লিখিয়া বলে ।” প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “তখন তাহার বিহিত বিধান করিব, এখন তাহার জন্ত ভাবিবার অবসর নাই ।” মহিষী কাদিয়া কহিলেন, “মহারাজ তোমার পায়ে পড়ি, আমার একটি কথা রাখে, একবার ভাবিয়া দেখো বিভার কী হইবে । আমার পাষাণ প্রাণ বলিয়া আজও রহিয়াছে, নহিলে আমাকে যত দুর যন্ত্রণা দিবার তা দিয়াছ । উদয়কে— অামার বাছাকে— রাজার ছেলেকে সামান্ত অপরাধীর মতে রুদ্ধ করিয়াছ । সে আমার কাহারও কোনো অপরাধ করে না, কিছুতেই লিপ্ত থাকে না, দোষের মধ্যে লে কিছু বোঝে সোঝে না, রাজকাৰ্য শেখে নাই, প্রজা শাসন করিতে জানে না, তাহার বুদ্ধি নাই, তা ভগবান তাহাকে যা করিয়াছেন, তাহার দোষ কী ” বলিয়া মহিষী দ্বিগুণ কাদিতে লাগিলেন। প্রতাপাদিত্য ঈষং বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “ও-কথা তো অনেকবার হইয়া গিয়াছে। যে-কথা হইতেছিল তাহাই বলে না।” মহিষী কপালে করাঘাত করিয়া কহিলেন, “আমারই পোড়া কপাল ! বলিব আর কী ? বলিলে কি তুমি কিছু শোন ? একবার বিতার মুখপানে চাও, মহারাজ । সে যে কাহাকেও কিছু বলে না— সে কেবল দিনে দিনে শুকাইয়া যায়, ছায়ার মতো হইয়া আসে, কিন্তু সে কথা কহিতে জানে না। তাহার একটা উপায় করে৷ ” প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া উঠিলেন। মহিষী আর কিছু না বলিয়া ফিরিয়া আলিলেন । o