পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ఫిఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী কাহার যেন নিশ্বাসপ্রশ্বাস শুনা যাইতেছে— আস্তে আস্তে পাশের ঘৱে গেল। নিয়া দেখিল, রুক্মিণীর শয়নগৃহ হইতে আলো আলিতেছে। প্রদীপট এখনো জলিতেছে মনে করিয়া সীতারামের অত্যস্ত আনন্দ হইল । তাড়াতাড়ি সেই ঘরের দিকে গেল । ও কে ও ! ঘরে বসিয়া কে ! বিনিদ্রনয়নে চুপ করিয়া বসিয়া কে ও রমণী ধর ধর করিয়া কঁাপিতেছে! অর্ধবৃত দেহে ভিজা কাপড় জড়ানো, এলোচুল দিয়া ফোট ফোটা করিয়া জল পড়িতেছে । কঁাপিতে কঁাপিতে তাহার দাত ঠক্ ঠক্‌ করিতেছে । ঘরে একটিমাত্র প্রদীপ জলিতেছে । সেই প্রদীপের ক্ষীণ আলো তাহার পাংগুবৰ্ণ মুখের উপর পড়িতেছে, পশ্চাতে সেই রমণীর অতি বৃহৎ এক ছায়া দেয়ালের উপর পড়িয়াছে— ঘরে আর কিছুই নাই— কেবল সেই পাংগু মুখশ্ৰী, সেই দীর্ঘ ছায়া আর এক ভীষণ নিস্তব্ধতা। ঘরে প্রবেশ করিয়াই সীতারামের শরীর হিম হইয়া গেল । দেখিল ক্ষীণ আলোকে, এলোচুলে, ভিজা কাপড়ে সেই মঙ্গলা বসিয়া আছে। সহসা দেখিয়া তাহাকে প্রেতিনী বলিয়া বোধ হইল। অগ্রসর হইতেও সীতারামের সাহস হইল না – ভরসা বাধিয়া পিছন ফিরিতেও পারিল না। সীতারাম নিতাস্ত ভীরু ছিল না, অল্পক্ষণ স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া অবশেষে একপ্রকার বাহিক সাহস ও মৌখিক উপহাসের স্বরে কহিল, “তুই কোথা হইতে মাগী । তোর মরণ নাই নাকি ৷” রুক্মিণী কট্‌মটু করিয়া খানিকক্ষণ সীতারামের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল— তখন সীতারামের প্রাণট। তাহার কণ্ঠের কাছে আসিয়া ধুকধুক্‌ করিতে লাগিল। অবশেষে রুক্মিণী সহসা বলিয়া উঠিল, “বটে। তোদের এখনও সর্বনাশ হইল না, আর আমি মরিব ” উঠিয়া দাড়াইয়া হাত নাড়িয়া কহিল, “ষমের দুয়ার হইতে ফিরিয়া আসিলাম । আগে তোকে আর যুবরাজকে চুলায় গুয়াইব, তোদের চুলা হইতে দু-মুঠ ছাই লইয়া গায়ে মাখিয়া দেহ সার্থক করিব— তার পরে যমের সাধ মিটাইব । তাহার আগে যমালয়ে আমার ঠাই নাই ।” রুক্মিণীর গলা গুনিয়া সীতারামের অত্যন্ত সাহস হইল। সে সহসা অত্যন্ত অনুরাগ দেখাইয়। রুক্মিণীর সহিত ভাব করিয়া লইবার চেষ্টা করিতে লাগিল। খুব যে কাছে ঘেষিয়া গেল তাহা নহে, অপেক্ষাকৃত কাছে আসিয়া কোমল স্বরে কহিল, "মাইরি ভাই, ওইজন্তই তো রাগ ধরে । তোমার কখন যে কী মতি হয়, ভালো বুঝতে পারি না । বল তো মঙ্গল, আমি তোর কী করেছি। অধীনের প্রতি এত অপ্রসন্ন কেন ? মান করেছিস বুঝি ভাই ? সেই গানটা গাব ?” ૧ সীতারাম যতই আমুরাগের ভান করিতে লাগিল, রুক্মিণী ততই ফুলিয়। উঠিতে লাগিল। তাহার আপাদমস্তক রাগে জলিতে লাগিল— গীতারাম যদি তাহার নিজের