পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆS షా রবীন্দ্র-রচনাবলী । স্বন্দরী কিঞ্চিৎ নালিশের নাকিস্বরে বললেন—পাখাওআলার রাত্রে পাখা টানতে টানতে ঘুমোয় । জোয়ান লোকটা বললে, তার একমাত্র প্রতিবিধান লাথি কিংবা লাঠি। পাখা-আন্দোলন সম্বন্ধে এইভাবে আন্দোলন চলতে লাগল। আমার বুকে হঠাৎ যেন একটা তপ্ত শূল বিধল। এইভাবে যারা স্ত্রীপুরুষে কথোপকথন করে তারা যে অকাতরে একসময় একটা দিশি দুর্বল মানব-বিড়ম্বনাকে ভবপারে লাথিয়ে ফেলে দেবে তার আর বিচিত্র কী ? আমিও তো সেই অপমানিত জাতের লোক, আমি কোন লজ্জায় কোন স্বখে এদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাই এবং একত্রে দত্তোল্মীলন করি। শরীরের সমস্ত রাগ কণ্ঠ পর্যন্ত এল কিন্তু একটা কথাও বহু চেষ্টাতে সে-জায়গায় এসে পৌঁছল না। বিশেষত ওদের ওই ইরেজি ভাষাটা বড়োই বিজাতীয়—মনটা একটু বিচলিত হয়ে গেলেই ও-ভাষাটা মনের মতো কায়দা করে উঠতে পারি নে। তখন মাথার চতুর্দিক হতে রাজ্যের বাংলা কথা চাক-নাড়া মৌমাছির মত মুখস্বারে ভিড় করে ছুটে আসে। ভাবলুম এত উতলা হয়ে উঠলে চলবে না, একটু ঠাণ্ড হয়ে দুটো-চারটে ব্যাকরণ শুদ্ধ ইংরেজি কথা মাথার মথ্যে গুছিয়ে নিই। ঝগড়া করতে গেলে নিদেন ভাষাটা ভালো হওয়া চাই । তখন মনে মনে নিম্নলিখিত মতো ভাবটা ইংরেজিতে রচনা করতে লাগলুম : কথাটা ঠিক বটে মশায়, পাখাওআলা মাঝে মাঝে রাত্রে ঢুললে অত্যন্ত অসুবিধা হয়। দেহধারণ করলেই এমন কতকগুলো সহ্য করতে হয় এবং সেই জন্যই খ্ৰীষ্টীয় সহিষ্ণুতার প্রয়োজন ঘটে। এবং এইরূপ সময়েই ভদ্রাভদ্রের পরিচয় পাওয়া যায় । যে লোক তোমার আঘাতের প্রতিশোধ নিতে একেবারেই অক্ষম, খপ করে তার উপরে লাথি তোলা চূড়ান্ত কাপুরুষতা ; অভদ্রতার চেয়ে বেশি। /* আমরা জাতটা যে তোমাদের চেয়ে দুর্বল সেটা একটা প্রাকৃতিক সত্যু—সে আমাদের অস্বীকার করবার জো নেই। তোমাদের গায়ের জোর বডেড বেশি– তোমরা ভারি পালোয়ান । '#' কিন্তু সেইটেই কি এত গর্বের বিষয় যে, মচুন্যত্বকে তার নিচে আসন দেওয়া হবে ? ‘তোমরা বলবে—কেন, আমাদের আর কি কোনো শ্রেষ্ঠতা নেই ?২ থাকতেও পারে । তবে, যখন একজন অস্থিজর্জর অধ-উপবাসী দরিদ্রের রিক্ত উদরের উপরে লাথি বসিয়ে দাও এবং তৎসম্বন্ধে রমণীদের সঙ্গে কৌতুকালাপ কর এবং হুকুমারীগণ ও তাতে বিশেষ বেদন অহুভব করেন না, তখন কিছুতে তোমাদের শ্রেষ্ঠ বলে ঠাহর করা যায় না। |