পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سالاطا A% | ফেরবার মুখে একটা গোরস্থানে"ঢোকা গেল। এখানকার গোর নূতন রকমের । অধিকাংশ গোরের উপরে এক-একটি ছোটো ঘর গেঁথেছে । সেই ঘর পর্দা দিয়ে ছবি দিয়ে রঙিন জিনিস দিয়ে নানা রকমে সাজানে, যেন মৃত্যুর একটা খেলাঘর— এর মধ্যে কেমন একটি ছেলেমান্থধি আছে, মৃত্যুটাকে যেন যথেষ্ট খাতির করা दश्छछ नीं । ... " গোরস্থানের এক জায়গায় সিড়ি দিয়ে একটা মাটির নিচেকার ঘরে নাবা গেল । , সেখানে সহস্ৰ সহস্ৰ মড়ার মাথা অতি স্বশৃঙ্খলভাবে স্ত,পাকারে সাজানো। আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই নিশিদিন যে একটা কঙ্কাল চলে বেড়াচ্ছে ওই মুওগুলো দেখে তার আকৃতিটা মনে উদয় হল। জীবন এবং সৌন্দর্য এই অসীম জীবলোকের উপর একটা চিত্রিত পর্দা ফেলে রেখেছে— কোনো নিষ্ঠুর দেবতা যদি হঠাৎ একদিন সেই লাবণ্যময় চর্মযবনিকা সমস্ত নরসংসার থেকে উঠিয়ে ফেলে, তা হলে অকস্মাৎ দেখতে পাওয়া যায় আরক্ত অধরপল্লবের অন্তরালে গোপনে বসে বসে শুষ্ক শ্বেত দন্তপংক্তি সমস্ত পৃথিবী জুড়ে বিদ্রুপের হাসি হাসছে । পুরোনো বিষয় । পুরোনো কথা ! ওই নরকপাল অবলম্বন করে নীতিজ্ঞ পণ্ডিতেরা অনেক বিভীষিকা প্রচার করেছেন, কিন্তু অনেকক্ষণ চেয়ে চেয়ে দেখে আমার কিছুই ভয় হল না । শুধু এই মনে হল, সীতাকুণ্ডের বিদীর্ণ জলবিম্ব থেকে যেমন খানিকটা তপ্ত বাষ্প বেরিয়ে যায়, তেমনি পৃথিবীর কত যুগের কত দুশ্চিন্তা, চুরাশা, অনিদ্রা ও শিরঃপীড়া ওই মাথার খুলিগুলোর, ওই গোলাকার অস্থি-বুদবুদগুলোর মধ্যে থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। এবং সেই সঙ্গে এও মনে হল, পৃথিবীতে অনেক ডাক্তার অনেক টাকের ওষুধ আবিষ্কার করে চীৎকার করে মরছে, কিন্তু ওই লক্ষ লক্ষ কেশহীন মস্তক তৎপ্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন, এবং দস্তমার্জনওআলার যতই প্রচুর বিজ্ঞাপন প্রচার করছে এই অসংখ্য দস্তশ্রেণী তার কোনো খোজ নিচ্ছে না। , * , যাই হ’ক আপাতত আমার নিজের কপালফলকটার ভিতরে বাড়ির চিঠির প্রত্যাশা সঞ্চরণ করছে। যদি পাওয়া যায় তা হলে এই খুলিটার মধ্যে খানিকটা - খুশির উদয় হবে, আর যদি না পাই তা হলে এই অস্থিকোটরের মধ্যে দুঃখ নামক একটা ব্যাপারের উদ্ভব হবে, ঠিক মনে হবে আমি কষ্ট পাচ্ছি । ২৩ অক্টোবর। স্বয়েজ খালের মধ্যে দিয়ে চলেছি। জাহাজের গতি অতি মন্থর । , * , " . উজ্জল উত্তপ্ত দিন ।- একরকম মধুর আলন্তে পূর্ণ আছি। যুরোপের ভাব সম্পূর্ণ কাটল । আমাদের সেই রৌদ্রতপ্ত শ্রাস্ত দরিদ্র ভারতবর্ষ, আমাদের সেই ধরাপ্রাস্তবর্তী ।