পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵՀ u রবীন্দ্র-রচনাবলী নানাবিধ ছেলে আসিয়া পড়িল । রাজা বিন্ধনকে কহিলেন, “এই দেখাে ঠাকুর, আমার ধুব।" বলিয়া ছেলেদের দেখাইয়া দিলেন । ܕܪ বিন্ধন কহিলেন, “যাহার প্রসাদে তুমি এতগুলি ছেলে পাইয়াছ সেও তোমাকে ভোলে নাই, তাহাকে আনিয়া দিই।” বলিয়া বাহিরে গেলেন। কিঞ্চিৎ বিলম্বে ধ্রুবকে কোলে করিয়া আনিয়া রাজার কোলে দিলেন। রাজা তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া ডাকিলেন, “খুব !” ধ্রুব কিছুই বলিল না, গভীর ভাবে নীরবে রাজার কাধে মাথা দিয়া পড়িয়া রহিল। বহুদিন পরে প্রথম মিলনে বালকের ক্ষুদ্র হৃদয়ের মধ্যে যেন একপ্রকার অস্ফুট অভিমান ও লজ্জার উদয় হইল । রাজাকে জড়াইয়া মুখ লুকাইয়া রহিল। রাজা বলিলেন, “আর সব হইল, কেবল নক্ষত্র আমাকে ভাই বলিল না ।” সুজা তীব্রভাবে কহিলেন, “মহারাজ, আর সকলেই অতি সহজেই ভাইয়ের মতো ব্যবহার করে, কেবল নিজের ভাই করে না ।” সুজার হৃদয় হইতে এখনো শেল উৎপাটিত হয় নাই । উপসংহার এইখানে বলা আবশ্যক তিনটি বালক সুজার তিন ছদ্মবেশী কন্যা । সুজা মক্কা যাইবার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়াছিলেন । কিন্তু দুৰ্ভাগ্যক্রমে গুরুতর বর্ষার প্রাদুর্ভাবে একখানিও জাহাজ পাইলেন। না । অবশেষে হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসিবার পথে, গোবিন্দমাণিক্যের সহিত দুর্গে দেখা হয়। কিছুদিন দুৰ্গে বাস করিয়া সুজা সংবাদ পাইলেন এখনো সম্রাটসৈন্য তাহাকে সন্ধান করিতেছে । গোবিন্দমাণিক যানাদি ও বিস্তর অনুচর। -সমেত তাহার বন্ধু আরাকান-পতির নিকটে তাহাকে প্রেরণ করেন । যাইবার সময় সুজা তাহাকে বহুমূল্য তরবারি উপহারস্বরূপ দান করেন। ইতিমধ্যে রাজা রঘুপতি ও বিন্ধনে মিলিয়া সমস্ত গ্রামকে যেন সচেতন করিয়া তুলিলেন । রাজার দুর্গ সমস্ত গ্রামের প্রাণ হইয়া উঠিল । এইরূপে ছয় বৎসর কাটিয়া গেলে ছত্রমাণিক্যের মৃত্যু হইল। গোবিন্দমাণিক্যকে সিংহাসনে ফিরাইয়া লইবার জন্য ত্রিপুরা হইতে দূত আসিল । গোবিন্দমাণিক্য প্ৰথমে বলিলেন, “আমি রাজ্যে ফিরিব না ।” বিম্বন কহিলেন, “ সে হইবে না মহারাজ ! ধর্ম যখন স্বয়ং দ্বারে আসিয়া আহবান করিতেছেন তখন তাহাকে অবহেলা করিবেন না ।” রাজা তাহার ছাত্রদের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আমার এতদিনকার আশা অসমাপ্ত, এতদিনকার কার্য অসম্পূর্ণ রহিবে ?” বিন্ধন কহিলেন, “এখানে তোমার কার্য আমি করিব।” রাজা কহিলেন, “তুমি যদি এখানে থাক তাহা হইলে আমার সেখানকার কার্য অসম্পূর্ণ হইবে ।" বিন্ধন কহিলেন, “না মহারাজ, এখন আমাকে আর তোমার আবশ্যক নাই। তুমি এখন আপনার প্রতি আপনি সম্পূর্ণ নির্ভর করিতে পাের। আমি যদি সময় পাই তো মাঝে মাঝে তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইব ।” রাজা ধ্রুবকে সঙ্গে লইয়া রাজ্যে প্রবেশ করিলেন । ধ্রুব এখন আর নিতান্ত ক্ষুদ্র নহে। সে বিন্ধনের প্ৰসাদে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করিয়া শাস্ত্ৰ-অধ্যয়নে মন দিয়াছে। রঘুপতি পুনর্বার পৌরোহিত্য গ্রহণ করিলেন । এবার মন্দিরে আসিয়া যেন মৃত জয়সিংহকে পুনর্বার জীবিতভাবে প্রাপ্ত হইলেন । EP(S|s) ||-