পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২০৯ লাভ করিত। এইজন্য কাহারে সহিত র্তাহার দেখা হইলে একটা সুদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরমালার স্বষ্টি হইত— ভালো তো ? শশী ভালো আছে ? আমাদের বড়োবাৰু ভালো আছেন ? মধুর ছেলেটির জর হয়েছিল শুনেছিলুম, সে এখন ভালো আছে তো ? হরিচরণবাবুকে অনেক কাল দেখি নি, তার অমুখবিসুখ কিছু হয় নি ? তোমাদের রাখালের খবর কী। বাড়ির এয়ারা সকলে ভালো আছেন ? ইত্যাদি । লোকটি ভারি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কাপড়চোপড় অধিক ছিল না, কিন্তু মেরজাইটি চাদরটি জামাটি, এমন-কি, বিছানায় পাতিবার একটি পুরাতন র্যাপার, বালিশের ওয়াড়, একটি ক্ষুদ্র সতরঞ্চ, সমস্ত স্বহস্তে রৌদ্রে দিয়া, ঝাড়িয়া, দড়িতে খাটাইয়া, ভাজ করিয়া, আলনায় তুলিয়া, পরিপাটি করিয়া রাখিতেন। যখনই তাহাকে দেখা যাইত তখনই মনে হইত যেন তিনি সুসজ্জিত প্রস্তুত হইয়া আছেন। অল্পস্বল্প সামান্য আসবাবেও তাহার ঘরদ্বার সমুজ্জল হইয়া থাকিত। মনে হইত যেন তাহার আরো অনেক আছে । তৃত্যাভাবে অনেক সময় ঘরের দ্বার রুদ্ধ করিয়া তিনি নিজের হস্তে অতি পরিপাটি করিয়া ধুতি কেঁচাইতেন এবং চাদর ও জামার আস্তিন বহু যত্বে ও পরিশ্রমে গিলে করিয়া রাখিতেন। র্তাহার বড়ে বড়ো জমিদারি ও বহুমূল্যের বিষয়সম্পত্তি লোপ পাইয়াছে, কিন্তু একটি বহুমূল্য গোলাপপাশ, আতরদান, একটি সোনার রেকবি, একটি রুপার আলবোলা, একটি বহুমূল্য শাল ও সেকেলে জামাজোড়া ও পাগড়ি দারিদ্র্যের গ্রাস হইতে বহুচেষ্টায় তিনি রক্ষণ করিয়াছিলেন। কোনো একটা উপলক্ষ উপস্থিত হইলে এইগুলি বাহির হইত এবং নয়নজোড়ের জগদবিখ্যাত বাবুদের গৌরব রক্ষা হইত। এ দিকে কৈলাসবাবু মাটির মানুষ হইলেও কথায় যে অহংকার করিতেন সেটা যেন পূর্বপুরুষদের প্রতি কর্তব্যবোধে করিতেন ; সকল লোকেই তাহাতে প্রশ্রয় দিত এবং বিশেষ আমোদ বোধ করিত । পাড়ার লোকে তাহাকে ঠাকুরদামশাই বলিত এবং তাহার ওখানে সর্বদা বিস্তর লোকসমাগম হইত ; কিন্তু দৈন্যাবস্থায় পাছে র্তাহার তামাকের খরচটা গুরুতর হইয়৷ উঠে এইজন্য প্রায়ই পাড়ার কেহ না কেহ দুই-এক সের তামাক কিনিয়া লইয়া গিয়া র্তাহাকে বলিত, “ঠাকুরদামশায়, একবার পরীক্ষা করিয়া দেখো দেখি, ভালো গয়ার তামাক পাওয়া গেছে।” ঠাকুরদামশায় দুই-এক টান টানিয়া বলিতেন, “বেশ ভাই, বেশ তামাক।” অমনি