পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি ర్నిరి তাদের বহুমূল্য ভোগের সামগ্রী ছারখার করবার জন্যে প্রজার হন্তে হয়ে উঠেছে। এতবড়ে উচ্চুম্বল উৎপাতের সময় বিপ্লবী নেতাদের কাছ থেকে কড়া হুকুম এসেছে— আর্ট-সামগ্রীকে কোনোমতে যেন নষ্ট হতে দেওয়া না হয় । ধনীদের পরিত্যক্ত প্রাসাদ থেকে ছাত্রর অধ্যাপকেরা অর্ধ-অভূক্ত শীতক্লিষ্ট অবস্থার দল বেঁধে যা-কিছু রক্ষাযোগ্য জিনিস সমস্ত উদ্ধার করে য়ুনিভার্সিটির মুজিয়মে সংগ্রহ করতে লাগল। মনে আছে আমরা যখন চীনে গিয়েছিলুম কী দেখেছিলুম। যুরোপের সাম্রাজ্যভোগীরা পিকিনের বসস্তপ্রাসাদকে কিরকম ধূলিসাং করে দিয়েছে, বহু যুগের অমূল্য শিল্পসামগ্রী কিরকম লুটে পুটে ছিড়ে ভেঙে দিয়েছে উড়িয়ে-পুড়িয়ে । তেমন সব জিনিস জগতে আর কোনোদিন তৈরি হতেই পারবে না। সোভিয়েটরা ব্যক্তিগতভাবে ধনীকে বঞ্চিত করেছে, কিন্তু যে ঐশ্বর্ষে সমস্ত মানুষের চিরদিনের অধিকার, বর্বরের মতো তাকে নষ্ট হতে দেয় নি। এতদিন যারা পরের ভোগের জন্যে জমি চাষ করে এসেছে এরা তাদের যে কেবল জমির স্বত্ব দিয়েছে তা নয় ; জ্ঞানের জন্যে, আনন্দের জন্তে, মানবজীবনের যা-কিছু মূল্যবান সমস্ত তাদের দিতে চেয়েছে ; শুধু পেটের ভাত পশুর পক্ষে যথেষ্ট, মানুষের পক্ষে নয়— এ কথা তারা বুঝেছিল এবং প্রকৃত মহন্তত্বের পক্ষে পালোয়ানির চেয়ে আর্টের অনুশীলন অনেক বড়ো এ কথা তারা স্বীকার করেছে। এদের বিপ্লবের সময় উপরতলার অনেক জিনিস নীচে তলিয়ে গেছে এ কথা সত্য, কিন্তু টিকে রয়েছে এবং ভরে উঠেছে মুজিয়ম থিয়েটর লাইব্রেরি সংগীতশাল। আমাদের দেশের মতোই একদা এদের গুণীর গুণপনা প্রধানত ধর্মমন্দিরেই প্রকাশ পেত। মোহন্তেরা নিজের স্থূল রুচি নিয়ে তার উপরে যেমন-খুশি হাত চালিয়েছে। আধুনিক শিক্ষিত ভক্ত বাবুরা পুরীর মন্দিরকে যেমন চুনকাম করতে সংকুচিত হয় নি, তেমনি এখানকার মন্দিরের কর্তারা আপন সংস্কার -অনুসারে সংস্কৃত করে প্রাচীন কীর্তিকে অবাধে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে— তার ঐতিহাসিক মূল্য যে সর্বজনের সর্বকালের পক্ষে এ কথা তারা মনে করে নি, এমন-কি পুরোনো পুজোর পাত্রগুলিকে নূতন করে ঢালাই করেছে। আমাদের দেশেও মঠে মন্দিরে অনেক জিনিস আছে, ইতিহাসের পক্ষে যা মূল্যবান। কিন্তু কারো তা ব্যবহার করবার জো নেই— মোহন্তেরাও অতলম্পর্শ মোহে মগ্ন— সেগুলিকে ব্যবহার করবার মতো বুদ্ধি ও বিদ্যার ধার ধারে না ; ক্ষিতিবাবুর কাছে শোনা যায়, প্রাচীন অনেক পুথি মঠে মঠে আটক পড়ে আছে, দৈত্যপুরীতে রাজকন্যার মতো, উদ্ধার করবার উপায় নেই। বিপ্লবীরা ধর্মমন্দিরের সম্পত্তির বেড়া ভেঙে দিয়ে সমস্তকেই সাধারণের সম্পত্তি করে ՀօկՀ ծ