পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ケ々 রবীন্দ্র-রচনাবলী অপ্রতিষ্ঠিতং বৈ কিল তে সাম, অস্তবদ বৈ কিল তে সাম । আদিভূতের যে বস্তুসীমায় প্রশ্ন এসে থেমেছিল সে সীমাও পেরোল। আজ মামুষের চরম ভৌতিক উপলব্ধি পৌছল গাণিতিক চিহ্নসংকেতে, কোনো বোধগম্যতায় নয়। একদিন আলোকের তত্ত্বকে মানুষ বোধগম্যতার পরপারেই স্থাপন করেছিল। অদ্ভুত কথা বলেছিল, ‘ঈথরের ঢেউ' -জিনিসকেই আলোকরূপে অনুভব করি। অথচ ঈথর যে কী আমাদের বোধের ভাষায় তার কোনো কিনারা পাওয়া যায় না। আলো, যা আমাদের দৃষ্টির ক্ষেত্রে সকল ভৌতিক জিনিসকে প্রকাশ করে দাড়ালে তা এমনকিছুর প্রকাশ যা সম্পূর্ণই ভৌতিক ধর্মের অতীত, কেবল ব্যবহারে মাত্র জানা যায় যে তাতে নানা ছন্দের ঢেউ খেলে। কিন্তু, প্রবাহণের গণনা থামে না। খবর আসে, কেবল তরঙ্গধর্মী বললে আলোর চরিত্রের হিসাব পুরো মেলে না, সে কণিকাবর্ষীও বটে। এই-সব স্ববিরোধী কথা মানুষের সহজ বুদ্ধির সহজ ভাষার সীমার বাইরেকার কথা। তবু বোধতিীতের ডুবজলেওমানুষ ভয় পেলে না। পাথরের দেয়ালটাকেও বললে বিদ্যুৎকণার নিরস্তর নৃত্য। সন্দেহ করলে না যে, হয়তো বা পাগল হয়ে গেছি। মনে করলে না, হয়তো প্রজ্ঞা, যাকে বলে রাজন, সে মানস-সার্কাসের ডিগবাজি-খেলোয়াড় ; সব জিনিসকে একেবারে উলটিয়ে ধরাই তার ব্যাবসা । পশুরা যদি বিচারক হত মানুষকে বলত জন্ম-পাগল । বস্তুত মামুষের বিজ্ঞান সব মানুষকে এক-পাগলামিতেপাওয়া জীব বলে প্রমাণ করছে। বলছে, সে যাকে যেরকম জানছে বলে মনে করে সেটা একেবারেই তা নয়, সম্পূর্ণই উলটো। জন্তুরা নিজেদের সম্বন্ধে এরকম লাইবেল প্রচার করে না। তাদের বোধের কাছে যেটা যা সেটা তাই, অর্থাৎ তাদের কাছে কেবল আছে তথ্য, তাদের অবিচলিত নিষ্ঠা প্রতীয়মানের প্রতি। তাদের জগতের আয়তন কেবল তলপৃষ্ঠ নিয়ে । তাদের সমস্ত দায় ঐ একতলাটাতেই। মানবজগতের আয়তনে বেধ আছে, যা চোখে পড়ে তার গভীরে। প্রত্যক্ষ তথ্যকে উপেক্ষা করলে মানুষের চলে না, আবার সত্যকেও নইলে নয়। অন্যান্য বস্তুর মতোই তথ্য মামুষের সম্বল, কিন্তু সত্য তার ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্ষের চরম লক্ষ্য অভাব দূর করা নয়, মহিমা উপলব্ধি করানো। তাই ঐশ্বৰ্ধ-অভিমানী মানুষ বলেছে, ভূমৈব স্থখং নাল্পে স্থখমস্তি । বলেছে, অল্পে স্থখ নেই, বৃহতেই সুখ । এটা নিতান্তই বেছিলাবি কথা হল। হিসাবিবুদ্ধিতে বলে, যা চাই আর যা পাই এই দুটো মাপে মিলে গেলেই মুখের বিষয়। ইংরেজিতে একটা চলতি কথা আছে, যা যথেষ্ট সেটাই ভূরিভোজের সমান-দরের। শাস্ত্রেও বলছে, সস্তোষং পরমাস্থায় স্বথার্থী সংঘতো ভবেৎ। তবেই তো দেখছি, সন্তোষে স্থখ নেই আবার সন্তোষেই স্থখ, এই