পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9૨૭ রবীন্দ্র-রচনাবলী দিকে । তাকেই এখন বলেছি বিরাটপুরুষ। সেই-যে মহামানব তারই মধ্যে গিয়ে নদী মিলবে, কিন্তু সকলের মধ্যে দিয়ে। এই-যে ডাক পড়ল, সুর্যের আলোতে জেগে মন ব্যাকুল হয়ে উঠল, এ আহ্বান কোথা থেকে। এর আকর্ষণ মহাসমূত্রের দিকে, সমস্ত মানবের ভিতর দিয়ে, সংসারের ভিতর দিয়ে, ভোগ ত্যাগ কিছুই অস্বীকার করে লয়, সমস্ত স্পর্শ নিয়ে শেষে পড়ে এক জায়গায় যেখানে— '* কী জানি কী হল আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ, । দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান। সেই সাগরের পানে হৃদয় ছুটিতে চায়, তারি পদপ্রাস্তে গিয়ে জীবন টুটিতে চায়। সেখানে যাওয়ার একটা ব্যাকুলতা অস্তরে জেগেছিল। মানবধর্ম সম্বন্ধে যে বক্তৃতা করেছি, সংক্ষেপে এই তার ভূমিকা । এই মহাসমুদ্রকে এখন নাম দিয়েছি মহামানব। সমস্ত মাহুষের ভূত ভবিষ্যং বর্তমান নিয়ে তিনি সর্বজনের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত। র্তার সঙ্গে গিয়ে মেলবােরই এই ডাক । এর দু-চার দিন পরেই লিখেছি 'প্রভাত-উৎসব’। একই কথা, আর-একটু স্পষ্ট করে লেখা— ди হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি ! জগত আসি লেখা করিছে কোলাকুলি। ধরায় আছে যত মানুষ শত শত আসিছে প্রাণে মোর, হাসিছে গলাগলি । এই তো সমস্তই মামুষের হৃদয়ের তরঙ্গলীলা । মামুষের মধ্যে স্নেহ-প্রেম-ভক্তির ষে সম্বন্ধ সেটা তো আছেই। তাকে বিশেষ করে দেখা, বড়ো ভূমিকার মধ্যে দেখা, যার মধ্যে সে তার একটা ঐক্য, একটা তাৎপর্য লাভ করে। সেদিন যে-দুজন মুটের কথা বলেছি তাদের মধ্যে যে আনন্দ দেখলুম সে সখ্যের আনন্দ, অর্থাৎ এমন-কিছু যার উৎস সর্বজনীন সর্বকালীন চিত্তের গভীরে । সেইটে দেখেই খুশি হয়েছিলুম। আরো খুশি হয়েছিলুম এইজন্তে যে, যাদের মধ্যে ঐ আনন্দটা দেখলুম তাদের বরাবর চোখে পড়ে না, তাদের অকিঞ্চিৎকর বলেই দেখে এসেছি ; যে মুহূর্তে তাদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ দেখলুম অমনি পরম সৌন্দর্যকে অনুভব করলুম। মানবসম্বন্ধের যে বিচিত্র রসলীলা, আনন্দ, অনির্বচনীয়ত, তা দেখলুম সেইদিন। সে দেখা বালকের কাচা লেখায় আকুবাকু করে নিজেকে প্রকাশ করেছে কোনোরকমে, পরিস্ফুট হয় নি। সে সময়ে আভাসে যা অনুভব করেছি তাই লিখেছি। আমি যে ষ-খুশি গেয়েছি তা