পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শু্যামলী br○ অবিচলিত নিয়মে ইস্কুলে যাবার গাড়ি । বালকের নিরুপায় অনিচ্ছার বোঝাটা টেনে নিয়ে গেছে রাস্তার ভিড়ের মাঝখান দিয়ে। আজ আর চেনা যাবে না সেই ছেলেকে— না দেহে, না মনে, না অবস্থায় । কিন্তু চিরদিন দাড়িয়ে আছে সেই আত্মসমাহিত তেঁতুল গাছ মানবভাগ্যের ওঠানামার প্রতি ভ্ৰক্ষেপ না ক’রে । মনে আছে এক দিনের কথা । রাত্রি থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ; ভোরের বেলায় আকাশের রঙ যেন পাগলের চোখের তারা । দিকৃহারানো ঝড় বইছে এলোমেলো, বিশ্বজোড়া অদৃশ্ব খাচায় মহাকায় পাখি চার দিকে ঝাপট মারছে পাখা । রাস্তায় দাড়ালো জল, আঙিনা গেছে ভেসে । বারান্দায় দাড়িয়ে দেখছি, ক্রুদ্ধ মুনির মতো ঐ গাছ মাথা তুলেছে আকাশে, তার শাখায় শাখায় ভৎসনা । গলির দুই ধারে কোঠাবাড়িগুলো হতবুদ্ধির মতো, আকাশের অত্যাচারে প্রতিবাদ করবার ভাষা নেই তাদের। একমাত্র ঐ গাছটার পত্রপুঞ্জের আন্দোলনে আছে বিদ্রোহের বাণী, আছে স্পর্ধিত অভিসম্পাত। অন্তহীন ইটকাঠের মূক জড়তার মধ্যে ঐ ছিল একা মহারণ্যের প্রতিনিধি— সেদিন দেখেছি তার বিক্ষুব্ধ মহিমা বৃষ্টিপাণ্ডুর দিগন্তে ।