পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক ১২৭ ব্ৰহ্মা বড়ো খুশি হলেন । বাসার জন্তে তিনি অন্ত জন্তুর কাউকে দিলেন বন, কাউকে দিলেন গুহা, কিন্তু এর দৌড় দেখতে ভালোবাসেন ব'লে একে দিলেন খোলা মাঠ। মাঠের ধারে থাকে মানুষ। কাড়াকুড়ি করে সে যা-কিছু জমায় সমস্তই মন্ত বোঝা হয়ে ওঠে । তাই যখন মাঠের মধ্যে ঘোড়াটাকে ছুটতে দেখে মনে মনে ভাবে, “এটাকে কোনো গতিকে বাধতে পারলে আমাদের হাট করার বড়ো স্ববিধে ।” ফাল লাগিয়ে ধরলে একদিন ঘোড়াটাকে । তার পিঠে দিলে জিন, মুখে দিলে কাটা লাগাম। ঘাড়ে তার লাগায় চাবুক আর কাধে মারে জুতোর শেল । তা ছাড়া আছে দলামলা । মাঠে ছেড়ে রাখলে হাতছাড়া হবে, তাই ঘোড়াটার চারি দিকে পাচিল তুলে দিলে । বাঘের ছিল বন, তার বনই রইল ; সিংহের ছিল গুহা, কেউ কাড়ল না । কিন্তু, ঘোড়ার ছিল খোলা মাঠ, সে এসে ঠেকল আস্তাবলে । প্রাণীটাকে মরুংব্যোম মুক্তির দিকে অত্যন্ত উসকে দিলে, কিন্তু বন্ধন থেকে বাচাতে পারলে না। যখন অসহ হল তখন ঘোড়া তার দেয়ালটার পরে লাথি চালাতে লাগল । তার পা যতটা জখম হল দেয়াল ততটা হল না ; তবু, চুন বালি থ’লে দেয়ালের সৌন্দর্য নষ্ট হতে লাগল । এতে মানুষের মনে বড়ো রাগ হল । বললে, “একেই বলে অকৃতজ্ঞতা । দানাপানি খাওয়াই, মোটা মাইনের সইস আনিয়ে আট প্রহর ওর পিছনে খাড়া রাখি, তবু মন পাই নে ৷” মন পাবার জন্তে সইসগুলো এমনি উঠে পড়ে ডাও চালালে যে, ওর আর লাথি চলল না । মানুষ তার পাড়াপড়শিকে ডেকে বললে, “আমার এই বাহনটির মতো এমন ভক্ত বাহন আর নেই ।” তারা তারিফ করে বললে, “তাই তো, একেবারে জলের মতো ঠাণ্ডা। তোমারই ধর্মের মতো ঠাও।” . একে তো গোড়া থেকেই ওর উপযুক্ত দাত নেই, নখ নেই, শিঙ নেই, তার পরে দেয়ালে এবং তদভাবে শূন্তে লাথি ছোড়াও বন্ধ। তাই মনটাকে খোলসা করবার জন্তে আকাশে মাথা তুলে সে চিছি চিছি করতে লাগল। তাতে মাছুষের ঘুম ভেঙে ধায় আর পাড়াপড়শিরাও ভাবে, আওয়াজটা তো ঠিক ভক্তিগদগদ শোনাচ্ছে না । মুখ বন্ধ করবার অনেকরকম যন্ত্ৰ বেরোল। কিন্তু, দম বন্ধ না করলে মুখ তো একেবারে ՀՆթ