পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 রবীন্দ্র-রচনাবলী মহিষী মাধবীকে ডেকে বললে, “আমার মেয়ে প্রবাসে গিয়ে যাতে প্রসন্ন থাকে সে ভার তোমার উপরে ” মাধবীর চোখে জল পড়ল না, কিন্তু অনাবৃষ্টির আকাশ থেকে যেন রৌদ্র ঠিকরে পড়ল । 粵 8 রাজকন্যার ময়ুরপংখি আগে যায়, আর তার পিছে পিছে যায় মাধবীর পাৰি । সে পাঙ্কি কিংখাবে ঢাকা, তার দুই পাশে পাহারা । পথের ধারে ধুলোর উপরে ঝড়ে-ভাঙা অশ্বখডালের মতো পড়ে রইলেন আচার্য, আর স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইল কুমারসেন । পাখিরা গান গাইছিল পলাশের ডালে ; আমের বোলের গন্ধে বাতাস বিহবল হয়ে উঠেছিল। পাছে রাজকন্যার মন প্রবাসে কোনোদিন ফাগুনসন্ধ্যায় হঠাং নিমেষের জন্য উতলা হয়, এই চিন্তায় রাজপুরীর লোকে নিশ্বাস ফেললে ।



পুনরাবৃত্তি সেদিন যুদ্ধের খবর ভালো ছিল না। রাজা বিমর্ষ হয়ে বাগানে বেড়াতে গেলেন । দেখতে পেলেন, প্রাচীরের কাছে গাছতলায় বসে খেলা করছে একটি ছোটো ছেলে আর একটি ছোটো মেয়ে । রাজা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কী খেলছ ।” তারা বললে, “আমাদের আজকের খেলা রামসীতার বনবাস ।” রাজা সেখানে বসে গেলেন । ছেলেটি বললে, “এই আমাদের দণ্ডকবন, এখানে কুটীর বঁধিছি।” সে একরাশ ভাঙা ডালপালা খড় ঘাস জুটিয়ে এনেছে, ভারি ব্যস্ত । আর, মেয়েটি শাক পাতা নিয়ে খেলার হাড়িতে বিনা আগুনে রাধছে ; রাম খাবেন, তারই আয়োজনে সীতার এক দণ্ড সময় নেই। রাজা বললেন, “আর তো সব দেখছি, কিন্তু রাক্ষস কোথায় ।” ছেলেটিকে মানতে হল, তাদের দণ্ডকবনে কিছু কিছু ক্রটি আছে। রাজা বললেন, “আচ্ছা, আমি হব রাক্ষস ।”