পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S48 রবীন্দ্র-রচনাবলী সে হাত জোড় করে বলল, “কত চলব। ঠাকুরের দুয়ার পর্যস্ত পৌছই এমন সাধ্য কি আমার আছে।” মন্ত্রী বললে, "ভয় কী রে তোর, রাজার সঙ্গে চলবি ।” সে বললে, “সর্বনাশ ! রাজার পথ কি আমার পথ ।” মন্ত্রী বললে, “তবে তোর উপায় ? তোর ভাগ্যে কি রথযাত্রা দেখা ঘটবে না।” সে বললে, “ঘটবে বই কি । ঠাকুর তো রথে করেই আমার দুয়ারে আসেন।” মন্ত্রী হেসে উঠল। বললে, “তোর দুয়ারে রথের চিহ্ন কই ।” দুঃখী বললে, “তার রথের চিহ্ন পড়ে না।” মন্ত্রী বললে, “কেন বল তো ।” 鞠 দুঃখী বললে, “তিনি যে আসেন পুষ্পকরথে।” মন্ত্রী বললে, “কই রে সেই রথ ।” দুঃখী দেখিয়ে দিলে, তার দুয়ারের দুই পাশে দুটি স্বর্যমুখী ফুটে আছে। সওগাত পুজোর পরব কাছে । ভাণ্ডার নানা সামগ্রীতে ভরা। কত বেনারসি কাপড়, কত সোনার অলংকার ; আর ভাণ্ড ভ'রে ক্ষীর দষ্ট, পাত্র ভ'রে মিষ্টান্ন । মা সওগাত পাঠাচ্ছেন। বড়োছেলে বিদেশে রাজসরকারে কাজ করে ; মেজোছেলে সওদাগর, ঘরে থাকে না ; আর-কয়টি ছেলে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া করে পৃথক পৃথক বাড়ি করেছে ; কুটুম্বর আছে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে । কোলের ছেলেটি সদর দরজায় দাড়িয়ে সারা দিন ধরে দেপছে, ভারে ভারে সওগাত চলেছে, সারে সারে দাসদাসী, থালাগুলি রঙবেরঙের রুমালে ঢাকা । দিন ফুরোল। সওগাত সব চলে গেল। দিনের শেষনৈবেস্তের সোনার ডালি নিয়ে সূর্যাস্তের শেষ আভা নক্ষত্ৰলোকের পথে নিরুদ্দেশ হল । ছেলে ঘরে ফিরে এসে মাকে বললে, “মা, সবাইকে তুই সওগাত দিলি, কেবল আমাকে না ।” মা হেসে বললেন, “সবাইকে সব দেওয়া হয়ে গেছে, এখন তোর জন্তে কী বাকি রইল এই দেখ, ।” এই বলে তার কপালে চুম্বন করলেন।