পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

の研 ২১১ মুখ শুকিয়ে গেল ; বললুম, আমরা খাই কী। বৌদিদি বললে, শুকনো কুঁচো চিংড়িমাছের মোরব্বা আছে টাটুকা চিটেগুড়ে জমানো । বাছারা খেয়ে নাও, নইলে পিত্তি পড়ে যাবে। কিছু খেলেম, অনেকটাই রইল বাকি । পুত্ত লালকে জিগেল করলুম, খাবি ? সে বললে, ভাড়টা দাও, বাড়ি গিয়ে আহ্নিক ক’রে খাব ৷ বাড়ি এলেম ফিরে । চটিজুতো ভিজে, গা-ময় কাদা । বনমালীকে ডাক দিয়ে বললুম, বাদর, কী করছিলি । সে হাউহাউ ক'রে কাতে কাদতে বললে, বিছে কামড়েছিল, তাই ঘুমচ্ছিলুম। ব’লেই লে চলে গেল ঘুমতে । এমন সময় একটা গুগুগোছের মাহুষ একেবারে ঘরের মধ্যে উপস্থিত। মস্ত লম্বা, ঘাড় মোটা, মোটা পিপের মতো গর্দান, বনমালীর মতো রঙ কালো, কাকড় চুল, খোচা খোচা গোফ, চোখ দুটো রাঙা, গায়ে ছিটের মেরজাই, কোমরে লাল রঙের ডোরাকাটা লুঙির উপর হলদে রঙের তিন-কোণা গামছা বাধা, হাতে পিতলের কাটামারা লম্বা একটা বাশের লাঠি, গলার আওয়াজ যেন গদাইবাবুদের মোটর গাড়িটার শিঙের মতো । হঠাৎ লে সাড়ে তিন মোন ওজনের গলায় ডেকে উঠল, বাবুমশায় ! চমকে উঠে কলমের খোচায় খানিকটা কাগজ ছিড়ে গেল । বললুম, কী হয়েছে, কে তুমি । সে বললে, আমার নাম পাল্লারাম, দিদির বাড়ি থেকে এসেছি, জানতে চাই তোমাদের সে কোথায় গেল । আমি বললুম, আমি কী জানি । পাল্লারাম চোখ পাকিয়ে হাক দিয়ে বললে, জান না বটে। ঐ যে তার তালিদেওয়া আঁশ-বের-করা সবুজ রঙের এক পাটি পশমের মোজা কাদামৃদ্ধ শুকিয়ে গিয়ে মরা কাঠবেড়ালির কাটা লেজের মতো তোমার বইয়ের শেলফে ঝুলছে, ওটা ফেলে সে স্বাবে কোন প্রাণে । আমি বললুম, লোকসান লইবে না, যেখানে থাকে ফিরে আসবেই। কিন্তু হয়েছে কী। পাল্লারাম বললে, পরশুদিন সন্ধের সময় দিদি গিয়েছিল জঙ্গিলাটের বাড়ি । লাটগিরির সঙ্গে গঙ্গাজল পাতিয়েছে। ফিরে এসে দেখে, একটা ঘটি, একটা ছাতা, একজোড়া তাল, হারিকেন লণ্ঠন, আর একটা পাথুরে কলার ছালা নিয়ে কোথায় লে