পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কখখনো নাপিতকে খায় না। আমি বললুম, বল কী । কেন বলে দেখি । খেলে ওদের পাপ হয় । ও, তা হলে কোনো ভয় নেই। এক কাজ করা যাবে, চৌরঙ্গিতে সাহেবনাপিতের দোকানে নিয়ে যাওয়া যাবে। পুপে হাততালি দিয়ে বলে উঠল, ই ই, ভারি মজা হবে। সাহেবের মাংস নিশ্চয় খাবে না, ঘেন্না করবে । খেলে গঙ্গাস্বান করতে হবে । খাওয়া-ছোওয়ায় বাঘের এত বাছবিচার আছে, তুমি জানলে কী করে, দিদি। পুপু খুব সেয়ানার মতো মুখ টিপে হেসে বললে, আমি সব জানি । আর, আমি বুঝি জানি নে ? কী জান, বলে তো । ওরা কখনো চাষী কৈবর্তর মাংস খায় না ; বিশেষত যারা গঙ্গার পশ্চিম-পারে থাকে । শাস্ত্রে বারণ। আর, যারা পুব-পারে থাকে ? তারা যদি জেলে কৈবর্ত হয় তো সেটা অতি পবিত্র মাংস ৷ সেটা খাবার নিয়ম বা থাকা দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে । বা থাবা কেন । ঐটে হচ্ছে শুদ্ধ রীতি । ওদের পণ্ডিতরা ডান থাবাকে নোংরা বলে । একটি কথা জেনে রাখো দিদি, নাপতিনীদের পরে ওদের ঘেন্না। নাপুতিনীরা যে মেয়েদের পায়ে আলতা লাগায়। তা লাগালেই বা ? সাধু বাঘেরা বলে, আলতাটা রক্তের ভান, ওটা আঁচড়ে কামড়ে ছিড়ে চিবিয়ে বের করা রক্ত নয়, ওটা মিথ্যাচার । এরকম কপটাচরণকে ওরা অত্যন্ত নিন্দে করে । একবার একটা বাঘ ঢুকেছিল পাগড়িওয়ালার ঘরে, সেখানে ম্যাজেন্টা গোলা ছিল গামলায়। রক্ত মনে ক’রে মহা খুশি হয়ে মুখ ডুবোলে তার মধ্যে। সে একেবারে পাকা রঙ । বাঘের দাড়ি গোফ, তার দুই গাল, লাল টকটকে হয়ে উঠল । নিবিড় বনে যেখানে বাঘেদের পুরুতপাড়া মোঘমারা গ্রামে, সেইখানে আসতেই ওদের আচাড়ি শিরোমণি ব'লে উঠল, এ কী কাও ! তোমার সমস্ত মুখ লাল কেন । ও লজ্জায় পড়ে মিথো করে বললে, গগুার মেরে তার রক্ত খেয়ে এসেছি ।